মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দেলুয়া গ্রামে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ব্যাটারি থেকে সিসা তৈরির একটি কারখানা। ওই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। কারখানার আশপাশের জমি থেকে ঘাস খেয়ে গত পাঁচ দিনে ৯টি গরুসহ ১০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। পরিবেশ দূষণের কারণে এলাকার ১০ একর জমির লেবু গাছ মরে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী এক নারীর সাটুরিয়া থানায় লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেলে (২৭ সেপ্টেম্বর) মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ হাফিজুর রহমান, সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম, সাটুরিয়া থানার ওসি মোঃ মতিয়ার রহমান মিঞা, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবৈধ কারখানাটি বন্ধ করে দেয়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিমসহ সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা দেলুয়া এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন এই সিসা তৈরির কারখানাটি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও কাস্টম এক্সাইজ, ভ্যাট অফিস এবং উপ-কর কমিশনের নিবন্ধন ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠানটি বিগত ৬ মাস যাবৎ কারখানাটিতে ব্যাটারির সিসা গলিয়ে প্রতি রাতে বাণিজ্যিকভাবে সিসা উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। অভিযোগ রয়েছে, এই কারখানার বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে যাওয়া ঘাস খেয়ে দেলুয়া গ্রামের মজিবর রহমানের পাঁচটি গরু, ইতি আক্তারের একটি, আফসার উদ্দিনের দুইটি গরু ও আবেদ আলীর দুইটিসহ ১০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
দেলুয়া গ্রামের মজিবর রহমানের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, আমি গরিব মানুষ। পাঁচ মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করছি। আমার কোনো জমি নেই। গরু পালন করে কোনোরকমে সংসার চালাই। বাড়ির পাশে কারখানার পাশ থেকে ঘাস কেটে এনে পাঁচটি গরুকে খাওয়াই। খাওয়ানোর পর থেকে এক এক করে পাঁচটি গরুই মরে যায়।
খামারি ইতি আক্তার বলেন, অবৈধভাবে গড়ে উঠা ব্যাটারির বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় তার একটি গরু মারা গেছে। অবৈধ কারখানার প্রতিবাদ করায় প্রতিনিয়ত হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ‘রাজাবাবু’ খ্যাত ইতি আক্তার।
স্থানীয় কৃষক মো. ফরহাদ হোসেন ও রাজিব হোসেন জানান, আমাদের পাঁচ বিঘা জমিতে লেবু গাছ রোপণ করেছিলাম। কিন্তু কারখানার বর্জ্য ও কালো ধোঁয়ায় লেবু গাছ হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম মুঠোফোনে ওই কারখানার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তিনি অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত নন। সাটুরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম পিপিএম জানান, এক ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে ২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া করা হয়েছে।