আমাদের গুনীজন
নাইমা জ্যাসন খালেক
জানিনা কিভাবে, কোন উপায়ে, কার সাহায্যে, ভারত থেকে আগত, দু’চোখে উদভ্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে, বোধ শক্তিহীন মধ্য বয়স্ক মহিলাটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সীমান্তে প্রবেশ করেছে..!!!!
সারাগায়ে খোশ পাঁচড়া, বোটকা দুর্গন্ধে মাছি তার আপন রাজত্ব ভেবে নিয়ে নিশ্চিন্তে শরীরের যত্রতত্র নির্বিকারে বসছে আর উড়ে বেড়াচ্ছে.!!
সম্ভবত নিজের মনুষ্য প্রজাতির অস্তিত্ব নিয়েও সে সন্ধিহান….কিছুই মনে করতে পারেনা..!!! জীবনের নূন্যতম প্রয়োজনটুকুও নিঃশেষ হয়ে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে কে জানে…?!
ঠিক এ সময়ে এ দেশের তাচ্ছিল্যভরে ‘মফিজ’— নামধারী উত্তরবঙ্গের রংপুরের মানুষের একজন ‘মফিজ ‘ স্বয়ং ফেরেস্তাকেও হার মানিয়ে মাতৃতুল্য এই অসহায় মহিলাটির পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁর,—মানুষের সেবার জন্য নিজের শেষ সম্বলটুকু বিলিয়ে তৈরী করা ডেরায় নিয়ে আসে। নিজ হাতে মহিলা টির খোশ পাঁচড়ার উপর কিলবিল করতে থাকা পোকা গুলি যত্ন সহকারে পরিস্কার করে ঔষধ লাগিয়ে দেন । দিনের পর দিন সেবা যত্নে সুস্থ করে তোলেন ঐ মহিলাটিকে..!!!
শুধু এই একজনকেই নয়…. এরকম অসংখ্য পথের মাঝে পড়ে থাকা অবহেলিত, কুকুর- বেড়ালের থেকেও অযত্নে থাকা মানুষগুলো,যাদের নিয়ে দু-দন্ড ভাবারও কারও সময় নেই তাদের, সেই ফেরেস্তা সমতুল্য মানুষটি সন্ধান পাবার সাথে সাথে তুলে নিয়ে এসে সেবা দেন।
রাস্তা-ঘাটে মরে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ লাশ গুলোর ধর্ম অনুসারে সৎকারের ব্যবস্থা করেন। নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে এরজন্য একটি কবরস্থান এবং বিশ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িয়ে পাওয়া, নাম পরিচয় ও বোধশক্তিহীন মানুষগুলোর জন্য একটি কুটিরও বানিয়েছেন তিনি এবং সাধ্যমতো নুন্যতম সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন…শুধুমাত্র প্রকৃত মানবিকতা দিয়ে…!!!!!
এরকমই রংপুরের কিছু প্রকৃত গুনীমানুষকে খুঁজে বের করে তাঁদের বিশাল কর্মগুনের কিঞ্চিৎ মূল্যায়ন স্বরুপ সংবর্ধনার আয়োজন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা-বৃত্তি ও রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আরও সুপ্রসারিত করার লক্ষে জেলা প্রশাসক ও রংপুর ফাউন্ডেশন এর পৃষ্টপোষকতায় এ অঞ্চলের বিভিন্ন শিল্পীদের নিয়ে তৈরী “সুরের ভূবনে”- সিডি এর মোড়ক উন্মোচন এর আয়োজন করেন ১৯৯৯ সালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কতৃক সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন এর ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত “রংপুর ফাউন্ডেশন ” এবং রংপুর জেলা প্রশাসন।
এরকম একটি মহতি অনুষ্ঠানে আমাদের রংপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক, বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব এনামুল হাবীব মহোদয় আমাকে নিজ হাতে কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ করে মানুষের কল্যানের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী উপায় সম্বন্ধে অবগত হবার সুযোগ দিয়ে সম্মানিত করায় তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে মাননিয় বিভাগীয় কমিশনার এ কে এম তারিকুল ইসলাম সহ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ, ছাত্র-ছাত্রী সহ অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।