যোগাযোগ ডেস্কঃ
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আজকের অনুশীলনের সময়সূচি ছিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। তারপরও বেলা ১টা ২০ নাগাদ দিনের প্র্যাকটিস শেষ করে দলবলসহ মাঠ ছাড়েন হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। সাথে ছিলেন দুই স্বদেশি বোলিং কোচ চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্ট আর ফিল্ডিং রায়ান কুক।
তার মানে টিম বাংলাদেশের সোমবারের অনুশীলন শেষ। কিন্তু একজন তখনও মাঠে। শেরে বাংলার সেন্টার উইকেটে একান্তে ব্যাটিং প্র্যাকটিসে নিমগ্ন। তিনি কে? না দেখে, না শুনে যে কেউ বলে দেবেন নিশ্চয়ই মুশফিকুর রহীম। হ্যাঁ, ঠিক তাই।
ভাদ্রের খরতাপেও ভরদুপুরে আরও এক ঘণ্টার বেশি সময় নেটে কাটালেন মুশফিক। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি; তিন ফরম্যাটের একটিতেও তিনি বাংলাদেশের টপ স্কোরার নন। কিন্তু সব ফরম্যাটেই মুশফিক মানে অন্যরকম নির্ভরতা, আস্থার প্রতীক। তাই তো তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসানের মত অতি কার্যকর পারফরমার দলে থাকার পরও এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা।
বিপদে, বিপর্যয়ে, সংকটে আর প্রয়োজনে ঠিক শক্ত হাতে হাল ধরেন এ ছোটখাট গড়নের কিন্তু অনেক বড় সাহসী ক্রিকেট যোদ্ধা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশফিক সবচেয়ে বেশি পরিশ্রমী। প্র্যাকটিসে তিনিই সবচেয়ে বেশি ছুটোছুটি করেন, বাড়তি ঘাম ঝরান। সবার চেয়ে বেশি সময় ধরে অনুশীলনও করেন। নেটে বা ইনডোরে বোলিং মেশিন আর একা একা ব্যাটিং প্র্যাকটিসটাও মুশফিকই করেন সবার চেয়ে বেশি।
সেই মুশফিক আজ শেরে বাংলায় না হয় তিন ঘণ্টা ব্যাটিং প্র্যাকটিস করলেন- এ আর নতুন কী? সবই পুরনো কথা, সবাই জানেন। হ্যাঁ তা জানেন ঠিকই।
এটাও সত্য যে, মুশফিক তো সীমিত ওভারের ম্যাচের আগেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে কাটান। সেই ব্যাটসম্যান আফগানস্তিানের সঙ্গে টেস্টের আগে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছেন- তা খালি চোখে মোটেই নতুন বা অস্বাভাবিক নয়।
তবে আজ মুশফিকের প্র্যাকটিসের ধরনটা ছিল নতুন। সোমবার শেরে বাংলায় ভাদ্রের খরতাপ উপেক্ষা করে মুশফিক ঠিক যেভাবে ব্যাটিং প্র্যাকটিসটা করলেন, তা দেখা যায়নি কখনো। প্র্যাকটিস সেশনের প্রায় ৭০ ভাগের বেশি সময় (প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার মত) ব্যাটিং অনুশীলনেই কাটলো মুশফিকের।
সেই সকাল ১০টায় এসে অল্প কিছুক্ষণ শরীর গরম করে সোজা শেরে বাংলার পূর্ব দিকে ইনডোরে চলে যাওয়া। সেখানে এক ঘন্টা ইনডোরে বোলিং মেশিন ও অন্য বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেয়া।
তারপর আবার ড্রেসিং রুম থেকে সোজা সেন্টার উইকেটে চলে যাওয়া। সেখানে অন্য সবার সঙ্গে রুটিন ব্যাটিং প্র্যাকটিস। সামনে যেহেতু টেস্ট, তাই সেখানেও আর সবার সাথে অন্তত আধ ঘন্টা ধরে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করা। এরপর সবার শেষ না হতেই অন্যরকম ব্যাটিং প্রস্তুতি শুরু।
তিন স্পেশালিস্ট স্পিনার জোবায়ের হোসেন লিখন আর একজন করে নেট বাঁহাতি স্পিনার ও অন্য এক অফস্পিনারকে নিয়ে একটানা দেড় ঘন্টার মত ব্যাটিং ঝালিয়ে নেয়া।
বোঝাই গেল, এ প্র্যাকটিস আফগানদের স্পিন আক্রমণ মোকবিলার সত্যিকার প্রস্তুতি। বলার অপেক্ষা রাখে না আফগান স্পিন ডিপার্টমেন্টটাও ঠিক মূলত তিন স্পিনারে সাজানো। যার একজন লেগি (রশিদ খান), একজন বাঁহাতি (জহির খান) আর অন্যজন অফস্পিনার (মোহাম্মদ নবী)।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশের উইলোবাজদের আসল লড়াইটা হবে ঐ আফগান ত্রিমুখী স্পিনারের বিরুদ্ধে। এমনও হতে পারে সেই স্পিনারদের বিপক্ষেই প্রচন্ড গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উইকেটে থাকতে হবে। লম্বা ইনিংস খেলতে হলে হয়তো লেগস্পিনার রশিদ খান, বাঁহাতি জহির খান আর অফস্পিনার মোহাম্মদ নবীকেই বেশি খেলতে হবে।
সে কারণেই আজ বাংলাদেশের সেরা লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন আর একজন বাঁহাতি ও অফস্পিনারের বিপক্ষে একদম একা প্রায় দুই ঘন্টার কাছাকাছি সময় গভীর মনোযোগে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন মুশফিক। কখনো একদম ব্যাট প্যাড এক সাথে রেখে বাঁ পা যতটা সম্ভব সামনে নিয়ে নিখুঁত ডিফেন্স। একদম বলের পিছনে শরীর ও বাঁ পা নিয়ে একদম বলের গন্ধ নেয়া আবার কখনোবা পেছনের পায়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখে নরম হাতে খেলা।
আবার কোনোটা কবজির মোচড়ে অফ ও অন সাইডে স্কয়ারে পুশ কর করা আর একটু খাটো লেন্থের পেলে সপাটে স্কয়ার কাট এবং কখনো কখনো সামনে এক বা দু পা বেরিয়ে তুলে মারা আর একদম নাগালের মাঝে পেলে কভার ও এক্সট্রা কভারের মাঝখান দিয়ে মাটি কামড়ে ড্রাইভ- তিনরকম স্পিনের বিপক্ষে নিজেকে দীর্ঘ সময় উইকেটে রাখার পাশাপাশি ব্যাকরণ মেনে খেলার প্রস্তুতিটা বেশ ভালই নিলেন মুশফিক।
দীর্ঘ সময়ের একদম সাজানো গোছানো ব্যাটিং প্র্যাকটিসে কি মুশফিক তার প্রিয় স্কুপ, সুইপ আর স্লগ সুইপ খেলেননি? হ্যাঁ, তাও খেলেছেন। তবে সংখ্যায় বেশ কম। তা দেখে সাংবাদিকদের একজন বলে উঠলেন, হঠাৎ স্কুপ, স্লগ সুইপ আর বলের লাইন-লেন্থ না ঠাউরে সুইপ খেলার প্রবণতা কমাতে পারলে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে টেস্ট আর ওয়ানডেতে মুশফিকের অন্তত এক থেকে দেড় হাজার রান বেশি থাকত। নামের পাশে টেস্ট-ওয়ানডে সেঞ্চুরিও থাকত বেশি। দেখা যাক সামনের দিনগুলোয় সেই প্রবণতা কমে কতটা?
সুত্রঃ জাগোনিউজ