আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন বাঙ্গালী জাতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাঙ্গালীদের শাসন করার অধিকার পায় বাঙ্গালী বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর: তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাঙালির পরিচয় বদলে দিয়েছেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে দল চারবার ক্ষমতায় এসেছে। উন্নয়ন ও অর্জনের মাধ্যমে তিনি দেশকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাঙালি ছিলেন না। তাঁর অন্দরমহলের ভাষা ছিল ফারসি ও উর্দু। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন বাঙালি জাতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাঙ্গালীদের শাসন করার অধিকার পায় বাঙ্গালী। এর আগে কখনো নিজেকে নিজে শাসন করার অধিকার পায়নি বাঙ্গালী।
ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে কীভাবে দেখতে চান—এ বিষয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা ছাত্রছাত্রী ও তরুণ পেশাজীবীরা প্যানেল আলোচকদের নানা প্রশ্ন করেন। মঞ্চ থেকে প্যানেল বক্তারা নানা বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে ঘোষণা বহুজন পাঠ করেছেন। বেতারের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান। এরপর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা সিদ্ধান্ত নেন সেনাবাহিনীর অফিসার দিয়ে পাঠ করানোর। তখন জিয়াউর রহমানকে দিয়ে ২৭ মার্চ ওই ঘোষণা পাঠ করানো হয়।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভির অনিন্দ্য প্যানেল আলোচকদের কাছে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে কি না?
জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যাঁরা এই বিতর্ক তৈরি করেছেন, তাঁরা ইতিহাস বিকৃত করতে চান। তবে মানুষ এখন প্রকৃত ইতিহাস জেনে গেছে। এরপর কেউ কেউ উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় পাঠচক্র করে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস জানানোর জন্য ছাত্রলীগ উদ্যোগ নিতে পারে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা আর ঘোষণা দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ নিজের জীবন হাতের মুঠোয় রেখে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী নূরুল হক শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। নূরুল হকের মতো আরও অনেক মানুষ সারা দেশে মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেছিলেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে আবারও পেছনে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চক্রান্ত হয়েছে। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ তাঁরা দুজনই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাঁরা দুজনেই ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। এরশাদ দেশের কিছু উন্নয়ন করলেও তাঁদের মন ছিল অন্যদিকে। বাংলাদেশকে সব সময় সঠিক পথে পরিচালিত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এখনো ধরে রেখেছে সেই নেতৃত্ব। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে সোনার বাংলা বিনির্মাণে আওয়ামী লীগের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, কক্সবাজারের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ।