তিনি ঢাকায় এসেছিলেন উদ্বাস্তু হয়ে। ছিল না জীবনধারনের সামর্থ্য; ছিল না খাবার; ছিল না আশ্রয়। নিজের ভাগ্যের চাবিকাঠি নিজের হাতে মেনে সে আজ ঢাকায় স্থানীয়।
ঢাকাতে [বাংলাদেশের রাজধানী] অবস্থানরত অবস্থায় আমদের দেখা হয় মোহাম্মদ মানিক ওরফে “মানিক নানার” সাথে। খিলগাঁও তালতলা সিটি কর্পোরেশন সুপারমার্কেট এর খিলগাঁও ঝিলপাড় মসজিদের পাশেই তার চায়ের দোকান।
তার বর্তমান জীবনের আগের উত্থান পতন এর কথা জানতে চাইলে বেরিয়ে আসবে তার জীবনের শত শত স্বপ্নের গল্প। চায়ের দোকানটি তার ২ বছরের পুরানো। এই জঞ্জালের শহরে জীবিকার আশায় তার যাত্রা শুরু হয় আনুমানিক ১৯৮০র দশকে। চেষ্টা আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে প্রনিয়ত।
এই শহরে তার জীবিকা শুরু হয় রিকশা চালক হিসাবে। ৬ বছর রিকশা চালানোর পরে সে তা ক্ষান্ত দিয়ে হোটেলের বেয়ারাগিরি শুরু করেন। বেয়ারাগিরির সাথে সাথে তিনি খাবার হোটেল চালানোর পরিকল্পনা করতেন। শিখতেন ব্যবসার কৌশল আর সাথে চলত সঞ্চয়। ৭বছর বেয়ারাগিরির পর তিনি একটা চায়ের দোকান দেন। আর তার সাফল্যের গল্প ঠিক শুরু হয় এখান থেকে।
ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি আর হিসাব করতে থাকেন নিজের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ। ৩ বছর পরে চায়ের দোকানের ইস্তফা টানেন তিনি। কিছুটা কর্জ আর নিজের সঞ্চয় ভেঙ্গে তিনি খাবার হোটেলের ব্যবসাতে বসলেন। তবে এবারের গতি তার ভিন্ন ছিল। সেই পুরনো বেয়ারা বেশে না এবার মালিক হয়ে বসেছিলেন তিনি। খাবার হোটেলের ১৪ বছরের ব্যবসায় তিনি নিজের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করেন। সেই ১৪ বছরে তিনি আরও মালিক হন ৩টি সি.এন.জি অটোরিক্সার, ঘর তোলেন গ্রামের বাড়ীতে এবং ঢাকা খিলগাঁও-এর নন্দীপাড়া তে জায়গা কিনে ফেলেন তিনি।
জীবনের ব্যস্ততা শেষ করে মোহাম্মদ মানিক অবসর জীবনে চলে যান। “ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে” উক্তিটার মতই মোহাম্মদ মানিক বেশি দিন বসে থাকতে পারেন নি অবসরে। তিনি আবার ফিরে এসেছেন চায়ের ব্যবসায়।
সুন্দরবনের কাছে আর বঙ্গোপসাগরের পাশে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সহজ সরল জীবনের এক মানুষ ছিলেন তিনি। পরিবার নিয়ে যার বসবাস এখন খিলগাঁও-এর চার দেয়ালে। শেষ জীবনে তার শেষ চাহিদা তার ছেলেদের জন্য ঢাকায় বাড়ি করে দেওয়া। এটা তার দায়িত্ব বলে তিনি মনে করেন কেননা তার সাফল্যের পিছনে তার পরিবারের বিরাট অবদান রয়েছে।
ব্যস্ততার মাঝেও তার মুখ থেকে হাসির ফুলঝুরি নামে না। বোঝা যায় ব্যস্ততা তার আপন বেশি। আপন লাগে চায়ের দোকানে খদ্দরের সাথে হাসি মশকরা। গল্প করতে করতে আবার খদ্দরের ভিড়ে শান্তির হাসিতে হারিয়ে যায় মোহাম্মদ মানিক। গমগম শব্দে নিরবতা ভাঙ্গে- “নানা? এক কাপ চা একা সিগারেট”।