ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারেন না জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থী

ফাইল- ছবি

২০১৮ -১৯ শিক্ষাবর্ষে ক, খ, গ, এবং চ মোট চার ইউনিটে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৪, ১৪ , ১০ দশমিক ৯৮ এবং ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ওপরের তিন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ এমসিকিউ (বহুনির্বাচনি) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। মোট ২০০ মার্কের মধ্যে ১২০ মার্কের ওপর এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর বাকি ৮০ মার্ক এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।

তবে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতির পাশাপাশি লিখিত আকারে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ২০০ নম্বরের ওপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যার ৮০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ধারণ এবং বাকি ১২০ মার্কের এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে সব ইউনিট মিলে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করেছিল মোট ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯১ জন শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল দুই লাখ ৬৪ হাজার ১৫৯ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হন মাত্র ৩৭ হাজার ২৫৮জন। সম্মিলিতভাবে এ পাসের হার মাত্র ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাকি ৮৫ দশমিক ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী ওই বছর ফেল করেছে। ওই বছরে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৪১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ জিপিএ ৫ প্রাপ্ত অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) ও এসএসসি (সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অটোপাস দেওয়া হয়। যে কারণে দীর্ঘসময় পিছিয়ে ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কোভিট-১৯ এবং অটোপাসের কথা বিবেচনায় নিয়ে এ বছর কমিয়ে আনা হয় পরীক্ষার মোট নম্বর। মোট ১২০ নম্বরের ওপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় যার মধ্যে ১০০ মার্কের এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা এবং ২০ মার্ক এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বণ্টিত করা হয়। তবে এতেও বাড়েনি পাসের হার। বরং অনেক ইউনিটে কমে এসেছে তুলনামূলক পাসের হার।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মোট পাঁচটি ইউনিটে সম্মিলিতভাবে পাশের হার ছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৭ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়। ক, গ, ঘ ও চ ইউনিটে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৫, ১৬ দশমিক ৮৯, ২১ দশমিক ৭৫, ৯ দশমিক ৮৭ এবং ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ৪ ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি।

সর্বশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ক, খ, গ, ঘ এবং চ মোট ৫ ইউনিটে অংশগ্রহণ করে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৫ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে সম্মিলিতভাবে পাস করে ২৭ হাজার ৪৮৮ জন পরীক্ষার্থী। যা শতকরায় ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অপরদিকে এ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। অর্থাৎ জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর ৬ ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি।

কেনো একজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পরেও ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারছেন না এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আব্দুল হালিমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বিশ্বিবদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। চাকরি নিয়োগ বা কোনো কিছুতে রিক্রুটমেন্টের মতোই এটি একটি পরীক্ষা। যেখানে পরীক্ষার্থীকে বাতিল করার প্রশ্ন থাকে। এখানে পাস আসল ফ্যাক্ট না।

তিনি আরও বলেন, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় যারা প্রতিযোগিতামূলক ভালো পরীক্ষা দেয়, তারা চান্স পায়। এর মানে এই নয় যে যারা চান্স পায় না তারা খারাপ ছাত্র। যে কোনোভাবেই প্রিপারেশনের ঘাতটি হতে পারে, পরীক্ষা সাডেনলি খারাপ হতে পারে। একজন শিক্ষার্থী একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করলেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো নাও করতে পারে। আবার অনেক শিক্ষার্থী একাডেমিক খারাপ করার পরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করতে পারে। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যারা একাডেমিক ফলাফলে ভালো রেজাল্ট বা জিপিএ ৫ না থাকা সত্ত্বেও চান্স পায় তাদের ব্যতিক্রম বলতে হবে। তার কারণ যারা ভালো রেজাল্ট করে আসে তারা ভর্তি পরীক্ষায় একটা নির্দিষ্ট মার্ক পাওয়ার সুবিধা ভোগ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. কামরুল হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে অধিক মনোনিবেশ করতে বলেন। তিনি বলেন, আমার কাছে ১০ গ্লাস শরবত বানানোর জন্য যথেষ্ট চিনি রয়েছে। কিন্তু আমি যদি ১০ গ্লাসের অতিরিক্ত শরবত বানাতে চাই তাহলে শরবত আর শরবত থাকবে না; শরবতে পানির স্বাদ দেখা দিবে। ঠিক তেমনই হয়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। শিক্ষার মান অবমূল্যায়ন হতে হতে এরকম হয়েছে। কাজেই এখন আর রেজাল্ট দিয়ে বলা যাবে না যে, জিপিএ ৫ পেলেই একজন শিক্ষার্থী মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করছে।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। কারিকুলাম ভালো করতে হবে। ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে রাজনীতি কমাতে হবে। শিক্ষাকে করতে হবে সার্বজনীন এবং মানসম্মত। কোনোভাবেই শিক্ষার মান কমানো যাবে না। সূএঃ আরটিভি। সম্পাদনা না/রি। স ০৩২৭/ ০৪

Related Articles