চট্টগ্রামে রমজানেও চাঙা বিএনপি

জনদুর্ভোগের কথা ভেবে সাধারণত রমজানে আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এবার সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে রমজানেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। প্রতি শনিবার কোনো না কোনো কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থাকছে। এর বাইরে ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই চলছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। দলীয় এসব কর্মসূচি ঘিরে চট্টগ্রামে রমজানেও চাঙা বিএনপি নেতাকর্মীরা।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ সিনিয়র নেতাদের সবাই মাঠে রয়েছেন। তাদের উপস্থিতি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জোগাচ্ছে বাড়তি অনুপ্রেরণা। প্রতিটি আন্দোলন কর্মসূচিতেই দেখা যাচ্ছে বিপুল উপস্থিতি। ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসাবে কাল শনিবারও রয়েছে থানায় থানায় অবস্থান কর্মসূচি। এতেও ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, শনিবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নগরীর ১৫টি থানায় আলাদা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। কর্মসূচি সফল করতে একযোগে মাঠে নামছেন সিনিয়র নেতারা। হালিশহর ও পাহাড়তলী থানার কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন থাকবেন বায়েজিদ থানার নেতৃত্বে।

এছাড়া পাঁচলাইশ থানায় কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন, বন্দর থানায় দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হক, সদরঘাট থানায় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম, বাকলিয়া থানায় নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, কোতোয়ালি থানায় সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে।

দলের নেতাকর্মীরা জানান, রমজানের পর বড় আকারের আন্দোলন কর্মসূচি আসতে পারে। চলমান আন্দোলনে যেন কোনো ছেদ না পড়ে, সেজন্য রমজানেও কর্মসূচি রাখা হয়েছে। এতে নেতাকর্মীরা খুশিই হয়েছেন। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। বিপুল জনসমাগমের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা জানান দিচ্ছেন, বিএনপি বড়সড় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।

নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর যুগান্তরকে বলেন, শনিবারের কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। আগের কর্মসূচির মতো এদিনও থানায় থানায় জনতার ঢল নামবে। মানুষ মাঠে নেমে গেছে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা আর ঘরে ফিরবে না।

রমজানেও দমন-নিপীড়ন থেমে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হচ্ছে। পুরোনো মামলায় প্রায় প্রতিদিনই আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। রমজানেও তাই আর বসে থাকার সুযোগ নেই। বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচি দিলেই হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে।’

এদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা একযোগে মাঠে থাকায় কর্মীরা আগের চেয়ে অধিক মাত্রায় আন্দোলনমুখী হচ্ছেন বলে দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তারা জানান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর নাছির নিয়মিত আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। এই তিন নেতার দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া তাদের রয়েছে বিপুল কর্মী সমর্থক।

১ এপ্রিল মহানগরের অবস্থান কর্মসূচিতে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, দক্ষিণ জেলার কর্মসূচিতে সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও উত্তর জেলার কর্মসূচিতে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার উত্তর জেলার ইফতার মাহফিলেও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিএনপির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। এতে নেতাকর্মীরা ক্লান্ত হননি। দমেও যাননি। বরং তারা আগের চেয়েও বেশি উজ্জীবিত। বিশেষ করে সিনিয়র নেতারা মাঠে থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে থাকার বাড়তি সাহস পাচ্ছেন।

দুই শীর্ষ নেতা খসরু ও নোমান এখনো আলাদাভাবেই আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের একসঙ্গে সভা-সমাবেশে দেখা যাচ্ছে না। গত সোমবার উত্তর জেলা বিএনপির ইফতার মাহফিলে আমির খসরু ও নোমানের একই মঞ্চে থাকার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নোমান আসেননি। তাই এ দুই নেতার একমঞ্চে বসাও আর হয়নি। এতে নেতাকর্মীদের অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেন। তারা আশা করেছিলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে হলেও এ দুজন দূরত্ব ভুলে কাছাকাছি আসবেন। কিন্তু নোমান উপস্থিত না হওয়ায় সেই আশা আর পূরণ হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এএম নাজিম উদ্দিন বলেন, কী কারণে নোমান সাহেব ইফতার পার্টিতে আসতে পারেননি, সেটা আমার জানা নেই। মানুষের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা থাকতে পারে। আমির খসরু ও আবদুল্লাহ আল নোমান একসঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে থাকেন না বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে শ্রমিক দলের বিভাগীয় সম্মেলনে দুজনই ছিলেন। বৃহত্তর স্বার্থে তারা একসঙ্গে কাজ করেন। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সূএঃ যুগান্তর। না/রি। স ০৪০৮/০১ 

Related Articles