দেশে দৈনিক ১৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের চেষ্টা

জাতীয় গ্রিডে আরও ৮০ লাখ ঘনফুট নতুন গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। এর আগে দফায় দফায় গ্যাস উত্তোলন করা হয় পরীক্ষামূলকভাবে। গ্যাসের মজুত, প্রেশারের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ায় পর সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় গ্রিডে সংযোগ দেওয়া হয়। 

সিলেট গ্যাস ফিল্ডের বিয়ানীবাজারের পরিত্যক্ত ১নং কূপে পাওয়া গেছে এই গ্যাস। জাতীয় গ্রিডে সংযোগ দেওয়ার পরপরই আরও সম্ভাবনার কথা যুগান্তরকে জানালেন পেট্রোবাংলার মালিকানাধীন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা যে বিশাল সম্ভাবনার পথে এগুচ্ছি তা শুনলে এই চরম সংকটের সময়ে চোখ কপালে উঠবে সবার। বিশ্বজুড়ে অনেকটা হইচই পড়ে যাবে।

জানান, শুধু সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ১৫টি কূপের চলমান কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হলে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৬ কোটি ফনফুট ছাড়িয়ে যাবে! এমন বিশাল অর্জন এখন আমাদের কাছে অনুমান বা ধারণা নয়। আমরা সবকিছু মাপজোখ করে, রিজার্ভের পরিমাণের জরিপ-হিসাব নিকাশ শেষ করেই এগুচ্ছি। এখন এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। তিনি জানান, আমাদের হাতে উৎপাদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন থাকা ১৫টি কূপের মধ্যে ছয়টির খনন, আটটির ওয়ার্কওভার ও একটির পাইপলাইনের কাজ চলছে। সম্ভবত ২০২৫ সালের মধ্যেই আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।

একই বিষয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী আব্দুল জলিল প্রামাণিক যুগান্তরকে বলেন, এসজিএফএল’র বিয়ানীবাজারের কূপ ছাড়াও গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা-৮ ও গোয়াইনঘাট-১০ নম্বর কূপ খনন এবং রশিদপুরে একটি পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষে এসজিএফএলের গ্যাস উৎপাদন আরও বাড়বে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে ২০২৫ সালের আগেই ২০২৩ সালেই আমরা ভালো একটা ফিড পাব। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস শিগগিরই জাতীয় গ্রিডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের গ্যাসের ফিড দিতে পারব। আর চলমান কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে ২০২৫ সালে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৬৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ১৬ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুটও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডের অপর এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিশ্ববাজারে সোনা, হীরা, মুক্তা, তরল সোনা কত কিছুর কথা আছে আমাদের গ্যাসের কথা নেই। বিশ্বজুড়ে এখন জ্বালানির যে তীব্র সংকট সেখানে একমাত্র আমাদের গ্যাসই আলোর পথ দেখাতে পারে, সেদিন বেশি দূরে নয়। শুধু গ্যাস নয় আগামীতে আরও বড় ধরনের কিছুর সন্ধান এখন সময়ের দাবি। তবে এই অমূল্য সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার অগাধ দেশপ্রেমের প্রয়োজন। একইভাবে সরকারি দল ছাড়াও সব দলের রাজনীতিকদেরও আন্তরিকতা খুবই জরুরি। নতুবা ‘গরিবের ধন’ নিয়ে উল্লাস করার চেয়ে হতাশ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। পেট্রোবাংলা-বাপেক্স অনেক দক্ষ, অথচ অতীতে বিদেশিদের হাতে গ্যাসক্ষেত্র তুলে দেওয়ায় আমাদের অগাধ সম্পদ হারাতে হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মেলে। এরপর আবিষ্কৃত হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র আছে। এর মধ্যে ছাতক গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত। বাকিগুলো হচ্ছে, হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এর মধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খনন করা কূপগুলোতে সফলতা এসেছে বেশ। আর বিদেশিদের মাধ্যমে কাজ করাতে গিয়ে চরম দুর্ঘটনার মাশুল গুনতে হয়েছে মাগুরছড়া ও টেংরাটিলার ট্রাজেডিতে। এদিকে গতকাল সোমবার থেকে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের পরিত্যক্ত ১ নম্বর কূপের প্রায় ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সন্ধ্যা ৬টা থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়। রাত ৮টায় সংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে জানান, গ্যাসের ফিড খুবই ভালো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১ নম্বর কূপ থেকে ১৯৯৯ সালে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। ২০১৪ সালে কূপটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে আবার উত্তোলন শুরু হলেও ওই বছরের শেষ দিকে আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়। কিছু রক্ষণাবেক্ষণের পর ২০১৭ সালে আরও সাত মাস গ্যাস উত্তোলন করা হয়। এরপর গ্যাস না পাওয়ায় কূপটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালে এ কূপসহ তিনটি কূপে ওয়ার্ক ওভার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর পরিত্যক্ত ১ নম্বর কূপে ওয়ার্ক ওভার কাজ শুরু করে বাপেক্স। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রতিদিন প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুটের মজুত পাওয়া যায় ওই কূপে। সূএঃ যুগান্তর। সম্পাদনা না/রি। স ১১২৯/০১

Related Articles