কানাডায় আন্তর্জাতিক ফোরামে নীতি-নির্ধারকরা

ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিকরা বিদেশী মিত্রদের এক সমাবেশে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলেছেন, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর অনুসারিরা ৮ নভেম্বরের  মধ্যবর্তী নির্বাচনে ব্যালট যুদ্ধে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় আমেরিকার গণতন্ত্র নিরাপদ হয়েছে। 

‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল আমাদের গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করেছে’-প্রকাশ্য এবং গোপনে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উভয় দলের সিনেটর এবং নীতি-নির্ধারকরা। ২০ নভেম্বর সমাপ্ত কানাডার নোভা স্কটিয়ায় তিন দিনব্যাপী ‘চতুর্দশতম হ্যালিফ্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোরাম’-এ গণতান্ত্রিক বিশ্বের হাল-হকিকত, মানবাধিকার এবং সুশাসন ইত্যাদি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয় এই সমাবেশে। 

গণতন্ত্র রয়েছে এমন ৮০ দেশের মন্ত্রী, রাজনীতিক, সামরিক অধিকর্তা, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। 
বহুর আলোচিত মধ্যবর্তী নির্বাচনের  পর মার্কিন জনপ্রতিনিধিগণের এটাই ছিল প্রথম বিদেশ সফর। ডেমক্র্যাট এবং রিপাবলিকান-উভয় দলের নীতি-নির্ধারকরাও ছিলেন সমাবেশে। উভয় দলের সিনেটর-কংগ্রেসম্যানরাই অকপটে স্বীকার করেছেন যে, ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা বিজয়ী হতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সংকট কেটে গেছে। 

আন্তর্জাতিক এই সমাবেশের আলোকে খ্যাতনামা নিউজ পোর্টাল ‘পলিটিকো’তে ইউএস সিনেটর জীনে শাহিনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সারাবিশ্বের গণতন্ত্রের জন্যে আমরা যখন চিৎকার করছি, তেমন সময়ে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র কতটা নিরাপদ তা ভেবে দেখা।’ 

উল্লেখ্য, এই সমাবেশে সিনেটর (নিউ হ্যামশায়ার) শাহিন ছিলেন কংগ্রেসনাল প্রতিনিধি দলের নেতা। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘ট্রাম্পের কট্টর ও উগ্রপন্থি সমর্থকের অনেকেই জয়ী হতে পারেননি। এটা গণতন্ত্রের জন্যে খুবই ভালো লক্ষণ।’ ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন বলে যারা মনে করছেন তাদের ব্যালট যুদ্ধে এই পরাজয়ের ফলে মার্কিন গণতন্ত্র সুসংহত হয়েছে। পেনসিলভেনিয়ার সিনেটর প্যাট টুমে (রিপাবলিকান) জানুয়ারিতে অবসরে যাবেন। 

তিনি বলেছেন, স্টেট গভর্ণর পদে দলীয় প্রার্থী ডোগ ম্যাস্ট্রিয়ানোকে আমি ভোট দেইনি। কারণ, তিনি গণতন্ত্রের শত্রু, তিনি জো বাইডেনের বিজয়কে মেনে নিতে পারেননি। দেলওয়ারের ইউএস সিনেটর ক্রিস কুন্স পলিটিকো’র কাছে বলেছেন, সারাবিশ্ব অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করেছে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার জঘন্য পরিস্থিতি। তা থেকেই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ উদ্বিগ্ন ছিলেন ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকদের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে। সকলেই স্বস্তিবোধ করছেন ওদের ভরাডুবির সংবাদ জেনে। তবে আমরা এখনও পারফেক্ট হতে পারিনি। ট্রাম্পের মত লোকজনকে আবারো প্রার্থীতা ঘোষণার আস্কারা প্রদানের জন্যে। 

সমাবেশে সাউথ ডেকটার রিপাবলিকান সিনেটর মাইক রাউন্ডস বলেছেন, গত নির্বাচনের ফলাফল হচ্ছে একটি শিক্ষা, যেখানে আমেরিকান ভোটারেরা গণতন্ত্রের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ভাগ্য প্রসন্নকারি স্টেটসমূহের অন্যতম ছিল নেভাদা, আরিজোনা এবং মিশিগান। এ তিনটি স্টেটে ট্রাম্পের মনোনীত গভর্ণর, স্টেট সেক্রেটারিরা পরাজিত হয়েছেন। 

এ সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কানাডার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অনিতা আনন্দ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড জে অস্টিনও একইদিন বক্তব্য দেন। মার্কিন কংগ্রেসনাল প্রতিনিধি দলে রিপাবলিকান পার্টি থেকে নেতৃত্ব দেন আইডাহোর সিনেটর জেমস রিশ্চ। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইস্যুতে বক্তব্য দিয়েছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট এলার ক্যারিস, ওয়ার্ল্ড উইঘোর কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ডলকোন ইসা। শীতল আবহাওয়াতেও দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক এবং যুদ্ধ দীর্ঘতর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে করনীয় নিয়ে কথা বলেন ন্যাটো মিলিটারি কমিটির চেয়ার রব বাউয়ের, ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্র্যাবার-কিতারোভিচ, ইউরোপিয়ান এবং ইউরো-আটলান্টিক ইন্টেগরেশন অব ইউক্রেনের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ওলগা স্টিফ্যানিশিয়ান। মিথ্যাচারের কবলে পড়া জাতিসমূহ আলোকে বক্তব্য রাখেন ইউএস সিনেটর ক্রিস কুন্স, স্টপ ফেইক ইউক্রেনের প্রধান সম্পাদক ইয়েভেন ফেডচেঙ্কো, যুক্তরাষ্ট্রের জিগসো’র সিইও ইয়াসমীন গ্রীন, অষ্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স অফিসের মহাপরিচালক এ্যান্ড্রু শিয়ারার, বেলারোসের ন্যাশনাল লিডার সিভিয়াটলানা টিখানোসকায়া। 

স্বাগত বক্তব্যে আয়োজক সংস্থার প্রেসিডেন্ট পিটার ভ্যান প্রাগ বলেন, এবারের সমাবেশে ইউক্রেন থেকেও দুই ডজনের অধিক কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করায় আমরা সম্মানীতবোধ করছি। তাদের এই উপস্থিতিতে প্রমাণ মেলে যে, আমরা গণতন্ত্রের প্রতি কতটা আন্তরিক এবং কোন ধরনের বর্বরতা কখনোই মুক্তিপাগল জাতিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। 

উল্লেখ্য, গত ১৪ বছর থেকেই প্রতি নভেম্বরে এই সমাবেশ হয়ে আসছে। আরো উল্লেখ্য, ‘হ্যালিফ্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোরাম’ একটি স্বাধীন, অলাভজনক, নির্দলীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে এর সদর দফতর হলেও এটি কানাডা সরকারের সর্বাত্মক সহায়তা পেয়েছে প্রতিষ্ঠালগ্নে। এখনও গণতান্ত্রিক বিশ্বের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে সরব রয়েছে। যার প্রতিফলন ঘটলো এবারের সমাবেশে ট্রাম্পের গণতন্ত্র বিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণের মধ্যদিয়ে। সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন। সম্পাদনা ম\হ। না ১১২১\০৬

Related Articles