৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে

আপনি যদি পাঁচ লাখ টাকার বেশি সরকারি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে চান অথবা পোস্টাল সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট খুলতে যান, তবে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। অর্থাৎ সরকার মনে করছে, আপনার আয় করযোগ্য আয়ের সীমাতে আছে। একইভাবে আপনার যদি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে, তাতে যেভাবেই হোক ক্রেডিট ব্যালান্স ১০ টাকা অতিক্রম করলে ব্যাংক রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র চাইবে। একই ঘটনা ঘটবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ আবেদনে বা ক্রেডিট কার্ড নিতে। অর্থাৎ আয়কর রিটার্ন জমা না দিয়ে এর কিছুই আপনি করতে পারবেন না।

আয়কর আদায় বাড়াতে আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এমন ৩৮টি ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এগুলোর অনেক ক্ষেত্রে আগে শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন সনদ জমা দিলেই হতো। এখন থেকে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে অর্থ বিলে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ৭৫ লাখ ১০ হাজার টিআইএন নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে মাত্র ২৯ লাখ। অর্থাৎ টিআইএনধারীদের বড় অংশই রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।সংশোধিত নিয়ম অনুসারে, কেউ সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইলে (হোক তা জাতীয় শিক্ষাক্রমের আওতায় ইংলিশ ভার্সন বা আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রমের অধীন ইংলিশ মিডিয়াম) আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ নিতে বা চালু রাখতেও রিটার্ন দিতে হবে।

একইভাবে পাড়া-মহল্লার মোবাইল রিচার্জের দোকানদারকেও তার কমিশন নিতে রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে। উপজেলা, জেলা পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে এবং জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী হতেও এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তবে এ ধরনের নিয়ম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাউকে যাতে হয়রানি না করা হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, ‘১০ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকে ক্রেডিট স্থিতি নানা কারণেই হতে পারে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নেওয়া এখন বড় কিছু নয়। এসব ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানোর যুক্তি আছে বলে মনে করি না। অর্থ বিলের এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’

ব্যক্তির ক্ষেত্রে আরও যেসব ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে, সেগুলো হলো- অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে, ঢাকা বা চট্টগ্রাম বা খুলনা বা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ভবন তৈরির প্ল্যান পাস করাতে, শেয়ারে মোটরযান ব্যবহার, জমি বা ফ্লোর স্পেস বা এ ধরনের কোনো অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে, চার চাকাবিশিষ্ট মোটরগাড়ির নিবন্ধন বা মালিকানা বদল, কোম্পানি বা সোসাইটি আইনের অধীনে নিবন্ধিত ক্লাবের সদস্য হতে এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা সদর ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি মূল্যে জমি বিক্রি বা বিক্রির ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে।

এর বাইরে পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মানবসম্পদ ও সিকিউরিটি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে মূল্য গ্রহণে, বীমা কোম্পানির এজেন্সি নিতে, এনজিও প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে, পণ্য সরবরাহের টেন্ডার জমা দিতেও রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ ছাড়া কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালক হতে, আমদানি-রপ্তানির সনদ নিতে বা নবায়ন করতে, সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স নিতে বা নবায়ন করতে, সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিতে, চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউট্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ার, সার্ভেয়ার ও স্থপতি বা এমন পেশায় কাজ করতে, বিবাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিবন্ধন নিতে, ব্যবসায় বা শিল্পে গ্যাসের সংযোগ নিতে, সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে। সূএঃ সমকাল। সম্পাদনা না/রি। স ০৬১৫/০৩

Related Articles