‘এখনকার জেনারেশন বলপয়েন্ট পেন, কালি শেষ হলেই অকেজো হয়ে যাবে’

অভিনয়ের টানে কৈশোরেই পরিবার ছাড়েন। সিরাজগঞ্জ থেকে একাই চলে আসেন ঢাকায়। অনেক বাধার মুখেও চালিয়ে গেছেন অভিনয়। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র, তিন মাধ্যমেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে অভিনয় শুরু করেছিলেন, সেটা কি পূর্ণ হয়েছে? দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন জাহিদ হাসান। জানান, এখনো সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।

জাহিদ হাসান বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল অভিনয়শিল্পী হব। সে চেষ্টাই করে গেছি সব সময়। কাজকে ভালোবেসেছি। প্রতিনিয়তই শিখছি। তিন দশকের বেশি কাজ করছি আর শিখছি। কতটা পেরেছি, জানি না। তবে এ কথা বহুবার শুনেছি, “জাহিদ ভাই, আমরা আপনাকে ব্যবহার করতে পারলাম না।” হয়তো তাঁরা আমার মধ্যে কোনো অভিনয়দক্ষতা খুঁজে পেয়েছিলেন।’

কিছু সময় চুপ থাকেন জাহিদ হাসান। চলে যান অতীতে, মঞ্চের দিনগুলোয়। ঢাকার নাট্যকেন্দ্র দলে তিনি অভিনয় শেখেন। প্রথমে সেখানে সুযোগই পাননি। মঞ্চে যাঁরা অভিনয় শেখাতেন, তাঁরা অনেকেই তাঁকে গুরুত্ব দিতে চাইতেন না। তারপরও হাল ছাড়েননি। অনেক চেষ্টার পর অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। ‘আজ রবিবার’, ‘আরমান ভাই’ সিরিজ ও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘হালদা’, ‘সাপলুডু’খ্যাত এই অভিনেতার কথা শুনে বোঝা যায়, ক্যারিয়ার নিয়ে এখনো আফসোস রয়েছে তাঁর। তিনি একনিশ্বাসে বলে চলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজাসহ অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছি। অনেকের সঙ্গে কাজ না করলেও সুসম্পর্ক রয়েছে। তাঁরাই যখন বলেন, আমার অভিনয়ের এখনো অনেক কিছু দেওয়ার বাকি আছে, তখন দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করা ছাড়া আমার কিছু করার থাকে না। ভাবি, এত দিনেও যেহেতু হয়নি, আর কি হবে? সবার আশা তো পূর্ণ হয় না। তারপরও এখনো অপেক্ষায়ই আমি আশা দেখি।’

বর্তমান কাজ তাঁকে খুশি করতে পারছে না। দিন শেষে আফসোস নিয়েই ঘরে ফিরতে হয়। তাঁকে প্রশ্ন করি, ‘কাজে আনন্দ না পেলে কেন অভিনয় করেন?’ তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের যুদ্ধের মতো। কিছুই নেই, এরপরও যা আছে, তাই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমি সেটাই মনোযোগ দিয়ে করছি। আমাদের অভিনয়শিল্পী, চিত্রনাট্যকার সবাই ব্যস্ত। কিন্তু ভালো কাজটাই হচ্ছে না। পূর্ণ শান্তি নিয়ে কাজ করতে পারলে হয়তো আরও ভালো থাকতে পারতাম। আর ওই যে বললাম, অপেক্ষা করছি। রাস্তা থেকে তো দূরে সরা যাবে না।’

বর্তমান কাজের ধারা নিয়ে জাহিদ হাসান বলেন, টেলিভিশনের নাটক এখন মার্কেটিংয়ের হাতে। তারা শুধু ফুটেজ চায়। গল্প ও নির্মাণ কেমন—এগুলো দেখে না। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইক, কমেন্ট দেখে অভিনয়ে নিচ্ছেন। তাই জাহিদ হাসান বলেন, ‘এভাবে অভিনেতা তৈরি হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা সাংস্কৃতিক এই অঙ্গনকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আবদুল্লাহ আল–মামুন, হুমায়ুন ফরীদি, আসাদুজ্জামান নূর ভাইদের অভিনয়ের জন্য দর্শক নাটক দেখেছেন। আমরা হচ্ছি ফাউন্টেন পেন, এটার কালি ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু আবার ভরাট করা যাবে। কলম ফেলে দিতে হয় না। এখনকার জেনারেশন বলপয়েন্ট পেন। দ্রুত চলে। কালি শেষ হলেই অকেজো হয়ে যাবে। এভাবে চললে আমরা শিল্পীসংকটে ভুগব।’

Related Articles