ইসলামে যাকাতের বিধান, নিয়ম ও ফযিলত

যাকাতের আভিধানিক অর্থ,বৃদ্ধি পাওয়া, বর্ধিত হওয়া। শরয়ী পরিভাষায় যাকাত নির্দিষ্ট পরিমান সম্পদ যা সুনির্দিষ্ট সময় বিশেষ মানবগোষ্ঠিকে প্রদান করা হয়। পারিবারিক খরচের চাহিদা মিটানোর পর এক বছরের উর্ধে জমাকৃত টাকা, মাল, গবাদিপশু, শশ্য, রুপা, গোল্ড, ডায়মন্ড ইত্যাদীর যাকাত আদায় করা ফরজ।

যাকাত ইসলামের ফরজকর্মসমূহের একটি এবং ইসলামের তৃতীয় রুকন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ) [النور:56] অর্থাৎ- {তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো।}[ সূরা আন-নূর:৫৬]

যাকাতের ফজিলতঃ

১- যাকাত আল্লাহর রহমত লাভের কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন : (وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ ) [الأعراف:156]

অর্থাৎ- {আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে।} [সূরা আল আরাফ:১৫৬]

২- যাকাত প্রদান আল্লাহর সাহায্য লাভের শর্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন: (وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠ ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ) [الحج:40-41]

অর্থাৎ {আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তারা এমন যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে...।}

[সূরা আল হাজ্জ: ৪০-৪১]

৩- যাকাত প্রদান গুনাহ মাফ হওয়ার কারণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সদকা গুনাহকে নিভিয়ে দেয় যেভাবে পানি আগুন নেভায়।’(বর্ণনায় বুখারী)

যাকাত অনাদায়কারীর হুকুমঃ

নগদ জমাকৃত টাকার শতকরা ২.৫০ টাকা করে যাকাত আদায়ও করতে হয়। সাড়ে সাত ভরি সোনা বা তার বেশী সোনার মুল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে।সোনার দোকানে রমজান মাসে ভরিপতি যাকাতের টাকার হিসাব টানিয়ে রাখে।

সুরা তাওবা-৬০ঃ যাকাত এর হকদার ৮ শ্রেনীর লোকঃ

১।অভাবগ্রসত ( গরীব)।  ২। মিসকিন, ৩।যাকাত সংগ্রহকারীর বেতন ও ভাতা, ৪।নও মুসলিম,  ৫। জেলছাড়া কয়েদী, ৬।দরিদ্র অথচ রিনগ্রস্ত, ৭।  আললাহর পথে থাকা মুজাহিদ, দরিদ্র হাজী,ফকির -দরবেশও ৮। মুসাফির। 

সুতরাং যাকাত বর্নিত ৮ ক্যাটাগরির মধ্যে টাকা বিতরন করতে হবে। পরার অযোগ্য কাপড়, নাম-ডাকের জন্য মাইকিং করে এনে পদদলিত হওয়ার কোন অপচেষ্টা ইসলাম বিরোধী কাজ হিসাবে গন্য হবে। সুরা আল ইমরান -৯২ঃ তোমাদের প্রিয় বস্তু আললাহর রাস্তায় খরচ না করা পরযন্ত তোমারা কেহ পূন্যের অধিকারী হবে না।

পক্ষানতরে আউলিয়াগন কতৃক আধ্যাতিক/ রুহানি সঞ্চয় থেকে ধর্মীয় ফকির এবং আখিরাতের দরিদ্রকে দান করা হচ্ছে তরিকতের যাকাত।মারেফাতের জাকাত হচ্ছে নগদ জমাকৃত  টাকার ৯৫%। অর্থাৎ একদিন চলার অর্থ রাখতে পারবেন, তার অতিরিক্ত নয়।  হাকীকতের জাকাত হচ্ছে নগদ জমাকৃত টাকার ১০০%.। অর্থাৎ তিনি কোন টাকা জমা বা হাতে রাখতে পারবেন না। তাঁকে আললাহর উপর পূর্ণ তাওয়াককুল রাখতে হবে।

Related Articles