দাম বাড়ানোর পর সয়াবিনের দেখা মিলেছে বাজারে

নতুন দর নির্ধারণের পর গতকাল রবিবার থেকে রাজধানীর বাজারে সয়াবিনের দেখা মিলেছে। ফিরতে শুরু করেছে হঠাৎ ‘উধাও’ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল। এসব বোতলের গায়ে নতুন নির্ধারিত দর দেওয়া। 

গতকাল রাজধানীর সবচেয়ে বড় খুচরা ও পাইকারিবাজার কাওরানবাজার, মহাখালীসহ বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে নতুন তেল সরবরাহের এ তথ্য জানা যায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত শনিবার বিকালের পর বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশকরা অর্ডার নিয়ে যায়। পরে আজ (রবিবার) সকালের দিকে পরিবেশকরা তেল সরবরাহ করেছেন। তবে এখনো সব ব্র্যান্ডের তেল বাজারে আসেনি। গতকাল পুষ্টি ও তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের সরবরাহ খুচরা ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন বলে জানান। তবে অন্যান্য ব্র্যান্ডের তেল দুই-এক দিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে পরিবেশকরা জানিয়েছেন।

গতকাল কাওরানবাজারের ইয়াছিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, বাজারে তেল চলে এসেছে। তিনি তার দোকানের তীর ও পুষ্টি ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন দেখিয়ে বলেন, অন্যান্য ব্র্যান্ডের তেলও চলে আসবে। এখন আর তেলের কোনো সংকট হবে না। ষাটোর্ধ্ব এই খুচরা ব্যবসায়ী অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, তেল নিয়ে যা হলো, তাতে আমরা আমাদের কাস্টমারদের কাছেই লজ্জা  পেয়েছি। তিনি বলেন, সংকট সৃষ্টি করে বড় বড় ব্যবসায়ীরা প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এক বছর আগেও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। যা এখন ৯৮৫ টাকা। তিনি বলেন, পরিবেশকরা তেল সরবরাহের সময় বলে দিয়েছে, খুব শিগ্গির দাম আরো বাড়বে? তেলের দাম যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটাই বুঝতে পারছি না। এই বাজারের জব্বার স্টোরের আজিজুর বলেন, বাজারে পরিবেশকরা তেল সরবরাহ শুরু করেছে। তেল কিনতে এসে ক্রেতাদের আর ফিরে যেতে হবে না।

এদিকে ভোজ্য তেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে দেশে ভোজ্য তেলের বর্তমান মজুদ, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরবেন বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। উল্লেখ্য, ঈদের দুই দিন আগে থেকে হঠাৎ করেই বাজার থেকে সয়াবিন, পাম অয়েল যেন অনেকটা ‘উধাও’ হয়ে যায়। তেল হয়ে যায় ‘সোনার হরিণ’। বাড়তি দাম দিয়েও অনেকেই চাহিদা মতো সয়াবিন, পাম অয়েল পাননি। অবস্থা এমন হয় যে, চাহিদামতো তেল না পেয়ে অনেকে ঈদে তাদের পছন্দমতো রান্না পর্যন্ত করতে পারেনি। কিন্তু হটাত্ করে এ অবস্থা হওয়ার কারণ কি ছিল ?

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অধিক মুনাফার লোভে একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণেই তেলের এই সংকট তৈরি হয়। তারা ইন্দোনেশিয়ার পামঅয়েল রপ্তানি বন্ধ ও আর্জেন্টিনার সয়াবিন তেল রপ্তানি সীমিত করার ঘোষণার সুযোগ নেয়। সেই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবতো রয়েছেই। ফলে অনেকটা বেকায়দায় পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিপাকে পড়ে ভোক্তারাও। পরে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি দরে দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের নতুন দর নির্ধারণ করে। যা দাবি ছিল, এই ‘তেল সিন্ডিকেটের’। নতুন দর অনুযায়ী খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৯৮৫ টাকা ও পাম সুপার ১৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ রমজানের শুরুতে পাঁচ লিটারে বোতলজাত সয়াবিন ৭৫০ থেকে ৭৬০ টাকা ও এক লিটারেরর বোতলজাত সয়াবিন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল বাজারে বোতলজাত যে সয়াবিন বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশকরা সরবরাহ করেছে, তাতে এই নতুন দর উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের ভোজ্যতেলের বাজার মূলত আমদানিনির্ভর। আন্তজার্তিক বাজারের অজুহাতে গত প্রায় দুই বছর ধরেই দেশে ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ ও আর্জেন্টিনা রপ্তানি সীমিত করার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ভোজ্য তেলের বাজার হু হু করে বাড়ছে। তবে বর্তমানে দেশের বাজারে যে সয়াবিন, পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে তা আগের আমদানি করা। তাই এখনই ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধের প্রভাব বাজারে কেন পড়বে? কারণ, আন্তাজর্তিক বাজারে দাম কমলে-তো দেশের বাজারে ব্যবসায়ীরা দাম কমান না। কিন্তু ভোক্তাদের এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? সূএঃ ইত্তেফাক। সম্পাদনা না/রি। স ০৫০৯/০২ 

Related Articles