আত্মসমর্পণ না করে দেশ ছাড়লেন সংসদ সদস্য হাজি সেলিম

আত্মসমর্পণ না করে দেশ ছাড়লেন পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজি সেলিম। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের এই এমপির ঈদের পর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের কথা ছিল। কিন্তু তার আগে শনিবার সন্ধ্যায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক যান।  

দেশ ছাড়ার আগে তিনি আজিমপুর কবরস্থানে যান।  আজিমপুর কবরস্থানে কবর জিয়ারত শেষে তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে যান। চিকিৎসার জন্য তিনি ব্যাংকক গেছেন বলে তার ঘনিষ্ট একজন জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা সমকালকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি ঈদুল ফিতরের পর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু  আত্মসমর্পণ না করেই তিনি গোপনে দেশত্যাগ করলেন। বর্তমানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজী সেলিম জামিনে আছেন। 

গত সপ্তাহে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ড বহালের রায় নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সোমবার বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সমকালকে বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এখন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতেই হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবেন আদালত। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন তিনি। এছাড়া নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা হাইকোর্টে বহাল থাকায় হাজী সেলিম এমপি থাকার যোগ্যতা অনেক আগেই হারিয়েছেন।

এর আগে গত ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছর সাজা কমিয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায় প্রদানকারী দুই হলেন, বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।

রায়ে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান হাজী সেলিম। দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরই সাজাপ্রাপ্ত হাজী সেলিম ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন শুরু হয়। প্রশ্ন উঠে, আদালতের এই পূর্ণাঙ্গ রায়ের পরে হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কী না বা তাকে এই পদে রাখা নৈতিক বিবেচনায় কতটা সমর্থনযোগ্য হবে?

সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন সাংসদ নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত হলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে। আর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুযায়ী তার সাজার রায় স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি এমপি হিসেবে বিবেচিত হবেন না।

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, সাজা বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সেটি দুদকের পক্ষ থেকে স্পিকারের কাছে পাঠানো হবে। এরপর স্পিকার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল পৃথক দুটি ধারায় হাজী সেলিমকে ১০ বছর ও তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। সূএঃ সমকাল। সম্পাদনা না/রি। স ০৫০২/০৩ 

Related Articles