নতুন নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে বিএনপি ছাড়া সব দলই

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের শুরুতেই এখন আলোচনায় সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রাধান্য পাচ্ছে। এই ব্যবস্থায় নির্বাচন হয় দলীয় প্রতীকের ওপর। আর আসন ভাগ হয় শতকরা ভোটের হারের ওপর। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ব্যবস্থায় গণতন্ত্র সংহত হয় এবং  সংসদে সবার অংশগ্রহণ থাকে। ক্ষমতায় গিয়ে কোনো দলের স্বৈরাচারি হওয়ার সুযোগ থাকে না।   

গত ১২ অক্টোবর ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধনী’ বিষয়ে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত বিষয়টি সামনে আসে। সেমিনারে বিএনপি, সিপিবি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এর মধ্যে বিএনপি ছাড়া অন্য দলগুলো আনুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে নিজেদের মত দেয়। 

জামায়াতে ইসলামী তাদের সংস্কার প্রস্তাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছে। তবে বিএনপি বলছে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা।

জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা আনুপাতিক নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছি। এর কারণ হলো প্রচলিত নির্বাচনে প্রকৃত জনমতের প্রকিফলন হয় না।

তার কথা, বিশ্বের যেসব দেশে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু আছে তারা গণতান্ত্রিকভাবে অনেক এগিয়ে আছে। আর বাংলাদেশে যে পদ্ধতি তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হয় না। একটি দল শতকরা ১২ ভাগ ভোট পেল কিন্তু দেখা গেল সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধি নাই। আবার কোনো দল ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে। বাকি দলগুলো মিলে ৭০ ভাগ ভোটারের কেনো গুরুত্ব নাই।

আকন্দ মনে করেন, এই পদ্ধতি চালু হলে হলে গণতন্ত্র সংহত হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য, ভোটে কারচুপি, সহিংসতা বন্ধ হবে। আর সবার প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমার এলাকার একটি নির্বাচনে আমি পেয়েছিলাম সাড়ে ৬২ হাজার ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী ৬৩ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অর্থাৎ এখানে এক লাখের বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়নি, হয়েছে ৬৩ হাজারের। ফলে এটা স্পষ্ট যে  প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটার উপেক্ষিত হয়। আনুপাতিক নির্বাচন হলে এরকম হবে না।

আনুপাতিক নির্বাচন চালু হলে নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা, মনোনয়ন বাণিজ্য ও পেশী শক্তির প্রভাব থাকবে না বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ বা কারণ থাকবে না। আমরা এই পদ্ধতির নির্বাচন চাইলেও বড় দলগুলো চায় না। কারণ প্রচলিত পদ্ধতিতে তাদের এককভাবে অনেক আসন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারা সবার প্রতিনিধিত্ব চায় না। কিন্তু গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য এটা প্রয়োজন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন অবশ্য এইসব যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, আসলে ভোটাররা প্রার্থী দেখতে চায়। তার দল ও প্রার্থী দেখে ভোট দেয়। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে চায়। আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটাররা প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ পায় না। আমাদের এখানে ওয়েস্ট মিনিস্টার ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমরা তো সেটাই চর্চা করতে পারছি না। আগে চর্চা শুরু হোক তারপর নির্বাচনের নতুন পদ্ধতি নিয়ে ভাবা যাবে।

তিনি মনে করেন, আনুপাতিক পদ্ধতিতে দলগুলো মনোনয়ন বাণিজ্য আরো বেশি করার সুযোগ পাবে। তখন তারা যোগ্য প্রার্থীর কথা চিন্তা করবে না। প্রতীক ভালো করলেই হলো। তখন তারা এমপি বানাতে বাণিজ্য করবে।

যে দলগুলো এই আনুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে তাদের ভোটের শতকরা হার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ ভোট পাওয়ার শর্ত থাকলে বেশিরভাগ দলই সেটা পাবে না বলেও মনে করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। সূত্র: যুগান্তর/ স/হ/ন 20/10/2024 

Related Articles