উল্লাপাড়ার মৃৎশিল্প ফিরে পাচ্ছে হারানো ঐতিহ্য
- by Sanjana Bhuiyan
- September 13, 2022
- 365 views
মৃৎশিল্প
নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন উল্লাপাড়ার শতাধিক ‘পাল’ পরিবার। ঢাকার সাভারসহ দেশের বিভিন্ন শহরের উদ্যমী কিছু উদ্দ্যোক্তা ব্যবসায়ী শোপিচ জাতীয় মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী অর্ডার দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন উল্লাপাড়া থেকে।
উল্লাপাড়া ঘোষগাঁতী করতোয়া নদীর তীরে বসতি গড়ে উঠে ‘পাল’ পরিবারের। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এই পরিবারের মৃৎশিল্পীরা মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা ধরনের বাসন-কোসন এবং খেলনাসহ শোপিচ সামগ্রী তৈরি করে আসছেন। এক সময় হাজার হাজার পরিবার মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করতেন। অথচ দিনকে দিন এই ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি মৃৎশিল্প আজ তার গৌরব হারাতে বসেছে। প্লাস্টিক সামগ্রীর কাছে তাদের মাটির তৈরি জিনিসপত্র আজ হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা হওয়ায় যেন নতুন করে স্বপ্নের দাঁড় উন্মোচিত হতে চলেছে উল্লাপাড়া ‘পাল’ সম্প্রদায়ের মাঝে।
এ ব্যাপারে সাভারের চারু শিল্পী শহিদুল হাসান ভোরের কাগজকে জানান, আমরা উল্লাপাড়া থেকে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা ও শোপিচ সামগ্রী অর্ডার দিয়ে তৈরি করে নিয়ে এসে রং-তুলির আঁচড় দিয়ে এসব সামগ্রী ভিন্ন রূপ দিয়ে শহরের বড় বড় বিপনী বিতানে সরবরাহ করে থাকি। এতে কিছু বেকার ছেলেদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির পাশাপাশি আমাদের দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মাটির জিনিসপত্র তৈরির কারিগর কুমার বা মৃৎশিল্পীদের কাজের গতিশীলতা পুনর্জীবিত হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে রতন পাল বলেন, এখনো আমরাই টিকিয়ে রেখেছি উল্লাপাড়াতে এই মাটির তৈরি মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্য। শোভা রানি পাল, যার বয়স ৫০ এর কোঠায়। তিনি বলেন, ঘোষগাঁতী-ঘাটিনাসহ সমগ্র উল্লাপাড়াতে এখনো ৮০-৮৫টি পাল পরিবার মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর কাজ করে চলেছেন। তবে অনেকেই এই পেশা থেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন। শুধু আমরাই আমাদের পূর্বপুরুষদের এই ঐতিহ্যবাহী কর্ম ধরে রেখেছি। তিনি আরো বলেন, যদিও মাটির তৈরি সামগ্রীর আর আগের মতো চাহিদা নেই।
এখন অল্প বাসন-কোসনসহ অর্ডার অনুযায়ী মাটি দিয়ে তৈরি শিশুদের জন্য নানা রকমের খেলনা- পুতুল, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, পাখি, হরিণ, ফুল, ফুলের টব, ফলমূল ইত্যাদি তৈরি করে থাকি। বর্তমানে অর্ডারকারী আমাদের উৎপাদিত সামগ্রীর যথাযথ মূল্য দিচ্ছেন বলেই আমরা নতুনভাবে, নতুন উদ্যমে মাটির তৈরি মৃৎশিল্পের কাজ করে চলেছি এবং এতে আমরা দারুণভাবে সন্তুষ্ট ও খুশি।
চন্ডি পাল বলেন, আমরা এঁটেল মাটি দিয়ে বাসন-কোসন বা খেলনা সামগ্রী তৈরি করি। পৌষ ও মাঘ মাসে মাটি সংগ্রহ করতে হয়। অন্যের জমি থেকে প্রতি হাজার মাটি ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয় এবং প্রয়োজনীয় মাটি সংগ্রহ করে রাখতে হয়। যা দিয়ে সাড়া বছর বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করি আমরা। বর্তমানে আমাদের আর্থিক সংকটের কারণে পর্যাপ্ত মাটি সংগ্রহে না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতাদের মাটির তৈরি জিনিসপত্র সরবরাহ করতে পারছি না।
গ্রামবাংলার মানুষের মন ও মননে, ভালোবাসায় গেঁথে রয়েছে মাটির প্রতি এক অবিচ্ছেদ্য অনুরাগ। এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের কথা বিবেচনা করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুবই প্রয়োজন বলে জানান, এলাকার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর প্যানেল মেয়র, এস এম আমিরুল ইসলাম আরজু।
ভোরের কাগজকে তিনি বলেন সরকারি-বেসরকারি উৎসাহ, প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের সুযোগ বাড়লে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই শিল্প ভূমিকা রাখতে পারে এবং এ পেশার উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে সরকার, উদ্যোক্তা ও ব্যাংকগুলো যদি এগিয়ে আসে তাহলে উল্লাপাড়ার মৃৎশিল্প ফিরে পেতে পারে তাদের হারানো ঐতিহ্য।সূত্রঃ ভোরের কাগজ। সম্পাদনা ম\হ। বৈ ০৯১৩\০৯