ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হচ্ছে আজ

ছবি: সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হচ্ছে আজ। রাতে সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল সেনা সদরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন। রাত আটটায় শপথ অনুষ্ঠান হতে পারে এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে ১৫ জনের মতো সদস্য থাকতে পারেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস গতকালই ফ্রান্স থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। আজ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকায় অবতরণ করার কথা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে সেনাবাহিনীর প্রধান উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। শপথ অনুষ্ঠানে চারশ’র মতো অতিথি থাকবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের করা মামলা থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে গতকাল। ফ্রান্স থেকেই গতকাল দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি একটি বার্তাও দিয়েছেন। এতে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বে দেয়া ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি দেশের আপামর জনসাধারণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেছেন, আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। 

ওদিকে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপদেষ্টাদের নামের তালিকা প্রকাশ হয়নি।  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত নামের তালিকা চূড়ান্ত করার আলোচনা চলছিল। সূত্রের দাবি ১৫ জন সদস্যের তালিকার মধ্যে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের রাখার চেষ্টা চলছে। যাতে উপদেষ্টাদের নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক তৈরি না হয়। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, আজ দুপুরের মধ্যেই উপদেষ্টাদের নাম চূড়ান্ত হয়ে যাবে। 

মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ওই সরকারের মেয়াদ কতোদিন হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপিসহ রাজনৈতিকদলগুলো দাবি করছে যতো দ্রুত সময়ে সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। 

গত সোমবার দুপুরের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। বিকালে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের তথ্য জানিয়ে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে। এরপর থেকে দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। 

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন ড. ইউনূস
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এমএ আউয়ালের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ রায় ও আদেশ দেন। দণ্ডিত অপর ৩ জন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। এর ফলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনই ৬ মাসের সাজা থেকে বেকসুর খালাস পেলেন।

গত ১লা জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এই মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনকে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ।

বেলা ৩টা ৫৫ মিনিটে ড. ইউনূসের আইনজীবী মামুন শুনানি শুরু করেন। ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত টানা শুনানি করেন। পরে আদালত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে দায়ের করা মামলার বাদীর বক্তব্য শোনেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৪টা ২৫ মিনিটে রায় দেন আদালত। রায়ে বিচারক বলেন, দুই নম্বর বিবাদী (মামলার বাদী) ও অন্যান্য বিবাদীদের (মামলার বাদী) অনুপস্থিতিতে বিনা খরচায় আপিল মঞ্জুর করা হলো এবং ৪ জন আসামিকে অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ অফিসার ইকবাল হোসেন রায়ের বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্য ৪ জনকে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালদের দেয়া (ফৌজদারী মামলা নং-২২৮/২০২১) ৬ মাসের সাজা ও জরিমানাসহ অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপিল (আপিল নং-৩৭/২০২৪) শুনানিঅন্তে মঞ্জুর করা হয়।

এবং ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের প্রদত্ত রায় ও আদেশের কার্যকারিতা রদ, রহিত ও বাতিল ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে ফৌজদারি মামলা নং-২২৮/২০২১ খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও অন্য ৪ জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে, যার অর্থ আপিলকারীগণ মামলার অভিযোগ হতে সসম্মানে অব্যাহতি পেয়েছেন।

তিনি আরও জানান, অত্র আপিল মামলা শুনানি আগামী ১৪ই আগস্ট ধার্য্য ছিল। কিন্তু গত ১লা আগস্ট উভয় পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত গতকাল শুনানির দিন ধার্য্য করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে উন্মুক্ত আদালতে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ রায় ও আদেশ প্রদান করেন। সূত্র: মানবজমিন/ স/হ/ন 08/08/2024 

Related Articles