শিগগির ই খালেদা জিয়া সকল ধরনের মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন
- by Suma Akhter
- September 21, 2024
- 81 views
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট দুটি দুর্নীতি মামলার সাজা মওকুফে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। হাতে পেয়েছেন তাঁর পাসপোর্ট। দীর্ঘদিন পর হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফিরেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর পর গত ৩ সেপ্টেম্বর মানহানির ৫ মামলা খারিজ করে খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। বিভিন্ন বিচারিক আদালতে বিচারাধীন থাকা এমন আরও ৩০ মামলার জাল থেকে তাঁকে বের করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। খুব শিগগির এসব মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপিদলীয় আইনজীবীরা।
আইনজীবী ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সহিংসতা, মানহানি ও নাশকতার অভিযোগে ৩৭টি মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করা হয়।
মামলাগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালে দুটি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একটি মামলা খারিজ করেন আদালত। এর মধ্যে সাতটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। বাকি রয়েছে আরও ৩০ মামলা।
এর মধ্যে বিচারিক আদালতে ১৯টি মামলা বিচারাধীন এবং হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে ১১টি মামলার কার্যক্রম। এসব মামলা অনিষ্পন্ন থাকলেও জামিনে রয়েছেন তিনি। মামলার মধ্যে গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলাসহ ছয়টি মামলা ঢাকার আদালতে বিচারাধীন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার সমকালকে বলেন, আইনগত পদ্ধতি অনুসরণ করে সামনের দিকে এগোনো হচ্ছে। শিগগির খালেদা জিয়া এসব মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একেকটি ধার্য তারিখে অব্যাহতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭৯ বছয় বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন। খুব দ্রুত তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে নানা আলোচনাও চলছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা-বানোয়াট মামলা করা হয়েছিল। এগুলো চলমান। যদিও প্রতিটি মামলা চলার মতো কোনো উপাদান নেই। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আইনি প্রক্রিয়ায় এসব মামলা মোকাবিলা করা হবে।
মামলার সর্বশেষ অবস্থা
রাজধানীর গাবতলী, বালুর মাঠ ও মিরপুর মাজার রোডসংলগ্ন এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধাদানসহ নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় ১১টি মামলা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলো বিচারের জন্য থাকলেও হাইকোর্টের আদেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোল বোমা দিয়ে চারজনের গায়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও হতাহতের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়। এসব মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে।
কুমিল্লায় তিন মামলা
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দারপুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওইদিন চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং নাশকতার অভিযোগে দুটি মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় কুমিল্লার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। দুটি মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।
একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় মারা যান সাত যাত্রী এবং গুরুতর আহত হন আরও ২৫-২৬ জন। এ ঘটনার পরদিন চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও বিচারকার্য এখনও শুরু হয়নি।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
এ ছাড়া নাইকো, গ্যাটকো, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির দুর্নীতিসহ ছয়টি মামলার বিচার নিম্ন আদালতে চলমান থাকলেও অসুস্থ থাকার কারণে ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো মামলার ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা দিতে পারেননি খালেদা জিয়া।
বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য সামনের দিকে এগোচ্ছি। সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। খুব শিগগির মামলাগুলো সরকার প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নাইকো মামলা
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ ওঠে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুদক।
২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ রয়েছে।
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা
ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াসহ ১৩ জনকে আসামি করে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়। ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। মামলার পরবর্তী তারিখ ৮ অক্টোবর।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এ মামলা করা হয়। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী তারিখ রয়েছে। সূত্র: সমকাল/ স/হ/ন 21/09/2024