ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মত প্রকাশের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা
- by Adib Hossain
- May 4, 2021
- 1000 views
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মত প্রকাশের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতাঃ আর্টিকল নাইনটিনের ওয়েবিনারে বক্তারা
ঢাকা ৩ মে, ২০২১
“করোনার দ্বিতীয় ঢেউ:জাতির নতুন ঝুঁকি -গণমাধ্যমে গভীর সংকট” শীর্ষক ওয়েবিনারে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিবন্ধকতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন,”স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কোনো সরকারই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেয়নি। নানা ভাবে কৌশলে তথ্য প্রকাশ করতে হয়েছে গণমাধ্যমকে। যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন তাদের চেহারা পাল্টে যায়। এমনকি
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রচারমাধ্যমগুলোও পরিণত হয় ক্ষমতাসীন দলের সম্পদে। অথচ এটি হওয়ার কথা জনগণের প্রচারমাধ্যম।“
এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রাক্কালে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল-১৯। “জনগণের কল্যাণে তথ্য” প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এ ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সোহরাব হাসান বলেন আরো বলেন, করোনাকালেও গণমাধ্যমের তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না।এ সময় হাসপাতাল ও করোনা সুরক্ষার সামগ্রি বাণিজ্যসহ নানা ধরনের দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানসহ সব বিষয়ে সরকার যতটুকু প্রকাশ করেছে, সাংবাদিকরাও ততটুকুই পেয়েছেন।এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে কর্মকর্তাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।এছাড়া সাংবাদিকতার পেশাগত মর্যাদা, ঐক্য, সাংবাদিকদের আর্থিক অনিশ্চয়তা, ছাঁটাই ও নিজস্ব পূঁজির অভাবসহ নানা প্রতিবন্ধকতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার খর্ব করে বলে মনে করেন তিনি।
একাত্তর টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর মিথিলা ফারজানা বলেন,বাক স্বাধীনতা বা তথ্যের অবাধ প্রবাহের নামে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, লেখক ও মুক্ত চিন্তাবিদদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কিন্তু যৌন হয়রানিকারী ও ট্রলকারীদের মতো প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, যে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং সাংবাদিকদের রক্ষা করার জন্য অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে,বিশেষত নারীরা অনলাইনে অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন।তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সবারই একটি দায়বদ্ধতার রয়েছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মহামারিতে একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ছাঁটাই,বেতন-বোনাসসহ পেশাগত সুরক্ষার বিষয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে মতামত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার এর প্রতিনিধি সালিম সামাদ। তিনি বলেন, এই আইনের খড়গ মাথার ওপর ঝুলে থাকে সবসময়। এ কারণে গণমাধ্যমে এক ধরনের সেলফ সেন্সরশিপ থাকে। এই আইন কাদের ওপর প্রয়োগ করা হবে তা সরকারই নির্ধারণ করে।মহামারিতে মৌলবাদীরা ব্যাপক ভূয়া সংবাদ ছড়িয়েছে এবং করোনাভাইরাস নিয়ে অপপ্রচার করেছে । কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। অথচ মাস্কের নিম্নমানের কথা বলায় একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামরা দায়ের করা হলো। এই অস্ত্রটা (ডিজিটার নিরাপত্তা আইন) কার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে এটা সরকারের মাথায় পরিষ্কার ভাবে আছে।'
এছাড়া নিজেদের স্বার্থ বা দলীয় লোকজনের স্বার্থ হাসিল করতেই প্রযোগ করা হয় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ আর সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা লোকজন সবচেয়ে বেশি হয়রানি করে বলে মনে করেন তিনি।
গণমাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে এ প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, সরকারের করোনা মহামারি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে যেভাবে প্রতিবেদন আসার কথা সেভাবে আসেনি। শুধু ঢাকার কথা এসেছে। আমাদের বড় সমস্যা আমাদের সবকিছু ঢাকায়।
আর্টিকেল নাইনটিনের এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, নারী সাংবাদিকদের জন্য অনলাইন হয়রানি বিশেষ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটির একটি সমাধান হওয়া জরুরি। নারী ও পুরুষ উভয় সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থা এ অনলাইন হয়রানি বন্ধে কী ভূমিকা রাখতে পারে তা বিশ্লেষণ জরুরি। সেই সঙ্গে গণমাধ্যম প্রতষ্ঠিানগুলোর অভ্যন্তরীণ বাক-স্বাধীনতার অভাবের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মরিয়ম শেলি। এতে বলা হয়, ২০২০ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৭২টি মামলার মধ্যে ৭০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মোট ৬৩টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়ে ৮৬ জনকে। এর মধ্যে ৮জন সাংবাদিক রয়েছেন। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৫০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জন সাংবাদিক রয়েছেন।করোনা মহামারিতে চাকরিচ্যুত ১ হাজার ৬০০ গণমাধ্যমকর্মীর মধ্যে ১৫০ জন নারী রয়েছেন। করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ জন গণমাধ্যমকর্মী।
ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন পুলক ঘটক, ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ, নাসিমা সুলতানা, ইসমত আরা ইসুসহ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিকরা।