সুন্দরবনে প্লাস্টিক-পলিথিন খেয়ে মরছে অসংখ্য প্রাণী
- by Maria Sultana
- April 21, 2024
- 375 views

ছবি- সংগৃহীত
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হলো সুন্দরবন। প্লাস্টিক দূষণ সুন্দরবনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সুন্দরবনের মাটি ও পানিতে অতিরিক্ত হারে মিলছে মাইক্রোপ্লাস্টিক (প্লাস্টিকের অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ)। যার ফলে প্লাস্টিক ও পলিথিন হুমকি বাড়াচ্ছে জলজ ও স্থল বন্যপ্রাণী এবং গাছপালার।
বানর পলিথিন খেয়ে ফেলছে এতে করে মারা যাচ্ছে অনেক বানর। শুশুক-ডলফিন চোখে ভালো দেখে না, যার কারণে তারাও পলিথিন পেলে জেলিফিশ মনে করে খেয়ে ফেলে। গায়ে পলিথিন জড়িয়ে মারা যাচ্ছে বহু কচ্ছপ। অন্যান্য জলজ প্রাণীও প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ খেয়ে ফেলছে। গাছের শ্বাসমূলের ওপর পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী পড়ে ক্ষতি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ঘটে চলার পরও দূষণ ঠেকাতে বন বিভাগের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরো জানা গেছে, সুন্দরবনের মধ্যে পর্যটক ও বনজীবীরা যেখানে সেখানে পলিথিন, চিপস, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের থালা ও কাপ ফেলে থাকে। বনের যেসব এলাকায় মানুষের যাতায়াত বেশি, সেখানে প্লাস্টিক দূষণও বেশি। তবে পর্যটক ও বনজীবীরা শুধু সুন্দরবনের ভেতরে গিয়েই দূষণ ঘটাচ্ছেন না, বনসংলগ্ন লোকালয় থেকেও এগুলো জোয়ার-ভাটায় নদীর পানিতে ভেসে বনে যায়। বনসংলগ্ন ৮০টি গ্রাম থেকে ৫২টি নদী-খাল হয়ে জোয়ারের সময় একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের থালা ও কাপ বনের মধ্যে চলে যাচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সুন্দরবনে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান একটি গবেষণা করেন। গবেষণার নাম ‘স্পেশাল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ক্যারেক্টারাইজেশন অব মাইক্রোপ্লাস্টিক ইন দ্য কোস্টাল ওয়াটার অ্যান্ড সেডিমেন্ট অব দ্য বে অব বেঙ্গল কোস্ট, বাংলাদেশ’। গবেষণায় সুন্দরবনের ছয়টি স্থানের পানি ও মাটি পরীক্ষা করা হয়। মাহাদী হাসান জানান, ওই গবেষণায় দেখা যায়, সুন্দরবনের প্রতি লিটার পানিতে গড়ে দুটি মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং প্রতি কেজি মাটিতে গড়ে ৭৩৪টি মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবনের নদী-খাল দিয়ে অসংখ্য জলযান চলাচল করে। এগুলো থেকে প্লাস্টিক ও পলিথিন সামগ্রী নদীতে ছোড়া হয়। সেগুলো মাটি ও পানিতে মিশে যায়। পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী পচনশীল না হওয়ায় বনের পরিবেশের ক্ষতি করছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মোংলার আহ্বায়ক নুর আলম শেখ বলেন, বন বিভাগ ২০২৩ সালের এপ্রিলে বনের মধ্যে পলিথিন প্লাস্টিক পণ্য বহন নিষিদ্ধ করলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বন বিভাগের যথাযথ তদারকি নেই।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক নাজমুস সাদাত বলেন, প্লাস্টিক দূষণের কারণে বনের স্থল ও জলজ প্রাণী এবং গাছপালার হুমকি বাড়ছে। এ বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এই দূষণ রোধে বন বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে পুতনির চর ও বঙ্গবন্ধু চর থেকে ১১ বস্তা প্লাস্টিক ও পলিথিন অপসারণ করা হয়েছে। খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, প্লাস্টিক দূষণ রোধে আরও কঠোর হবেন তারা।
সুত্রঃ সমকাল সম্পাদনা ম\হ। না ২১০৪\০১।