সুরে, তালে চারুকলায় শরৎ উৎসব
- by Sanjana Bhuiyan
- September 23, 2022
- 338 views
ইট-পাথরের নগরীতে নেই শুভ্র কাশবন। বহুতল দালানে ঢাকা আকাশ। তবুও নাগরিক জীবনে সাদা মেঘ আর কাশফুলের কথা মনে করিয়ে দিতে আয়োজন হলো শরৎ উৎসব। রোদ ঝলমলে প্রভাতে গানের সুর, নাচের ছন্দে উৎসবটি হলো আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়।
সকাল সাড়ে সাতটায় স্বপন সরকারের বাংলাঢোলের বোলে সূচনা হয় উৎসবের। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্যোগে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই আয়োজন করা হয়েছে। এবার নিয়ে ১৭ বছর হলো শরৎ উৎসবের। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ । সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সহ সভাপতি ড. নিগার চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বাংলার ছয় ঋতুকে সাজিয়েছেন। মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা এখানে সর্বোত্তম। সব ঋতুকে নিয়েই তিনি সৃষ্টির আনন্দে মেতেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ঋতুর আবির্ভাবের অনুষ্ঠান শুরুতে করেছে ছায়ানট। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্য দিয়ে তারা ঋতুকে আমন্ত্রণ জানানোর অনুষ্ঠান শুরু করেছিল। এখন সারাদেশে প্রত্যেক ঘরে ঘরে ধর্ম-বর্ণ-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছে। জাতির পিতা পহেলা বৈশাখে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিলেন।
তিনি বলেন, কাশফুল দেখলেই শরতের কথা মনে পড়ে। প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে আমাদের থাকতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হলে প্রকৃতিকে তার নিজের মতো করে রাখতে হবে। ঋতুভিত্তিক এই উৎসবগুলো আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বিকশিত করার পাশাপাশি প্রকৃতির প্রতিও সচেতন করে তোলে। সে কারণে এ ধরনের উৎসব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত।
শুক্রবার শরৎ উৎসবে ঢাবির ক্যাম্পাসের চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয় নৃত্যানুষ্ঠান। ছবি: ভোরের কাগজ
মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শরৎকালের কতগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কবিদের লেখনি, ছোটগল্প, কবিতা ও সংগীতে শরৎ ঋতু নানাভাবে এসেছে। এর প্রধান উপজীব্য হিসেবে কখনো আকাশ, কখনো প্রকৃতি, কখনো শিউলি, কখনো কাশফুলের বর্ণনায় শরৎ উদ্ভাসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঋতুতে আসলেই সবাই একটি ভিন্ন ধরনের আমেজ উপভোগ করে। শরৎকালের আকাশ সুবিশাল এবং সুগভীর। প্রকৃতি থেকে আমাদের একটি শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শরতের সুউচ্চ ও সুবিশাল আকাশ যেন আমাদের মনের উদারতাকে বৃদ্ধি করে। মনের উদারতা যদি বৃদ্ধি পায় তবে সে মানুষ হবে অনেক অসাম্প্রদায়িক এবং অনেক মানবিক।
গোলাম কুদ্দুছ তার বক্তব্যে ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলোর মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, কার্বণ নিঃস্বরনের কারণে প্রকৃতির রঙ হারাতে বসেছে। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। তাই বৃক্ষ নিধন নয়, বৃক্ষ রোপন করতে হবে। ঋতুভিত্তিক উৎসব আয়োজন করতে হবে।
শরৎ উৎসব, বসন্ত উৎসব, নবান্ন বা বৈশাখী উৎসবের মতো ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো সব শ্রেণির মানুষকে একতাবদ্ধ করে তোলে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সব মানুষের এই ঐক্যবদ্ধতা খুবই জরুরি।
শরৎ বন্দনা করে একক ও দলীয় গান, নৃত্য ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেখ শুকতারা আঁখি মেলে চায়’ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘নমো নমো বাংলাদেশ মম ’ গান দুটি সম্মিলিত কণ্ঠে পরিবেশন করেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। ‘শিউলী তলায় ভোর বেলায়’ সম্মেলক গান গেয়ে শোনায় সুরবিহার এর শিল্পীরা। বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনি’, সুরনন্দনের শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘এসো শরদ প্রাতের প্রতীক’, আগমনী নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। এরপর নৃত্যাক্ষ পরিবেশন করে ‘আজ শরতে আলোর বাঁশি বাজায়’ শীর্ষক দলীয় নৃত্য। সুরবিহার পরিবেশন করে ‘নীল অঞ্জন ঘন কুঞ্জ ছায়ায়’ ভাবনা নৃত্যদল পরিবেশন করে ‘ওলো শেফালি ওলো শেফালি আমার’, ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলী’ গানের সঙ্গে ছিল নৃত্যজনের শিল্পীদের সমবেত নৃত্য, বুলবুল ললিতকলা একাডেমির ‘এসো শারদ প্রাতে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন।
‘এবার অবগুণ্ঠণ খোল’ একক গান গেয়ে শোনান ফাহিম হোসেন চৌধুরী, অনিমা রায় গেয়েছেন ‘শরৎ আলোর কোমল বনে, বিমান চন্দ্র মিস্ত্রী গেয়েছেন ‘শিউলী ফুলের মালা দোলে’, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস গেয়েছেন, ‘হিংসা নিন্দা ছাড়ো মনটা করো পরিস্কার’, শ্রাবনী গুহ রায় গেয়ে শোনান ‘শরৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে’, সঞ্জয় কবিরাজ গেয়ে শোনান ‘দূর প্রবাসে মন কাঁদে’, আরিফ রহমান গেয়েছেন ‘চাতুরি করিয়া মোরে বান্ধিয়া পিরিতের ডোরে’, ফেরদৌসী কাকলী গেয়েছেন ‘হৃদয়ে ছিলে জেগে দেখি আজ শরৎ মেঘে’, রত্ন সরকার গেয়েছেন ‘এখন আমার চোখে নীল আকাশ’, এস এম মেজবাহ গেয়েছেন ‘আরে ও জীবন ছাড়িয়ে’, নবনীতা জাহিদ চৌধুরী গেয়েছেন ‘ভাসে আকাশে শুকতারা হাসে’, তাপসী ঘোষ গেয়েছেন ‘সখী লোকে বলে কালো’, মারুফ হোসেন গেয়ে শোনান ‘মনে নাইগো আমার বন্ধুয়ার মনে নাই’, ‘ঐ মহাসিন্ধুর ওপার হতে গেয়েছেন’ মামুন জাহিদ খান।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাসুদুজ্জামান, নায়লা তারান্নুম, আহসান উল্লাহ তমাল, সেবতী প্রভা, শিল্পবৃত্ত। যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেন ইফতেখার সোহেল, স্যামসন সরকার।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাহফুজা মিরা, নসরাহ ইয়াসমিন রুম্পা।সূত্রঃ ভোরের কাগজ। সম্পাদনা ম\হ। বৈ ০৯২৩\০৭