করোনা ভ্যাকসিন পেতে ‘সব পথ খোলা’ রেখেছে বাংলাদেশ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা পেতে একটি কিংবা দুটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চায় না বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োগে সুফল মিলছে- সেসব টিকা বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত সাতটি দেশ/সংস্থার অনুমোদন না পেলেও তা নেওয়া হবে। এ জন্য নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ওষুধের ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং ইউরোপীয় রেগুলারিটি অথরিটিসহ সাতটি দেশ ও সংস্থার অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহূত টিকাগুলোর অধিকাংশের এই সাতটি দেশ ও সংস্থার অনুমোদন নেই। এরপরও বিভিন্ন দেশে এসব টিকার প্রয়োগে কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, শুরুতে এফডিএসহ সাতটি দেশ ও সংস্থার অনুমোদনের বাইরে টিকা গ্রহণ না করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। এ কারণে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এই টিকা উৎপাদন করবে এবং দ্রুততম সময়ে পাওয়া যাবে।

সে অনুযায়ী তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তিও করা হয়। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী টিকা পায়নি বাংলাদেশ। এর পর বাংলাদেশের টিকার দ্বিতীয় উৎস ছিল কোভ্যাক্স। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন জোট কোভ্যাক্স থেকে মোট জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশের টিকা দেওয়ার কথা ছিল। সাতটি দেশ ও সংস্থার অনুমোদন নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রচলিত যে বিধিমালা রয়েছে, কোভ্যাক্সের টিকাও তার মধ্যে পড়ে। 

এ কারণে সরকার অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু ওই দুই উৎস থেকে চাহিদা অনুযায়ী টিকা না পেয়ে নীতিমালায় পরিবর্তন এনে দেশে টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে করে যে কোনো উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করতে পারবে বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে টিকা ব্যবস্থাপনা কোর কমিটির সদস্য ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সমকালকে বলেন, টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে একটি কিংবা দুটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে বিপদ হতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ ব্যবহারের যে নীতিমালা আছে, তা সংশোধন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ওই নীতিমালা সংশোধন হলে নির্ধারিত সাতটি প্রতিষ্ঠান ও দেশের বাইরেও অন্যান্য উৎস থেকে মানসম্পন্ন টিকা কিংবা ওষুধ সংগ্রহ করা যাবে।

ডা. মীরজাদী বলেন, টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সংকট চলছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ভারতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির পর সে দেশে ব্যাপকভাবে টিকাদানের জন্য রপ্তানি স্থগিত করেছে। এতে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ টিকা পায়নি। কোভ্যাক্সেও টিকা দেওয়ার কথা ছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের। কিন্তু রপ্তানি স্থগিত থাকায় তারাও টিকা পায়নি। এ কারণে কোভ্যাক্স প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে টিকা দিতে পারেনি। এতে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সংকট থেকেই দুই বা ততোধিক বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্রঃ সমকাল। 

Related Articles