জাস্টিন ট্রুডোর নতুন তোপ, উন্নতির লক্ষণ নেই ভারত-কানাডা সম্পর্কের

খালিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে শিখদের বিক্ষোভ। ছবি- রয়টার্স

কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতির বিন্দুমাত্র লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বরং কানাডার অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গতকাল শনিবার ভারতের নাম না করে বলেছেন, বড় রাষ্ট্র যদি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে, তা পুরো বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

ট্রুডো এ মন্তব্য করলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক শেষ হওয়ার পরই। সেই বৈঠকে কানাডা-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ভারতের বিরুদ্ধে সে দেশের নাগরিক হত্যার যে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এনেছেন, তার তদন্তে সাহায্যের হাত বাড়ানোর যে অনুরোধ করেছেন, ভারত এখনো তা আমলে নিতে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপরই ট্রুডোর ওই মন্তব্য। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কানাডা অবস্থান কঠোরতর করছে।

ওই অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেন, ‘যেদিন আমাদের নাগরিক হত্যার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আমাদের হাতে এসেছে, সেদিন থেকেই আমরা ভারতকে সত্য উদ্‌ঘাটনে সাহায্যের হাত বাড়ানোর কথা বলে আসছি। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য বন্ধুদেরও বলছি আন্তর্জাতিক আইন ভাঙা ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করার মতো এই গুরুতর বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হতে। আমরা এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। যেমন অব্যাহত থাকবে তদন্তের কাজ।’ 

ভারতের বিরুদ্ধে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘনের সরাসরি অভিযোগ এনে ট্রুডো বলেন, ‘৪০ জন কূটনীতিককে একতরফাভাবে দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া আমাদের হতাশ করেছে। ওই আচরণ ভিয়েনা কনভেনশনবিরোধী।

কানাডার নাগরিককে হত্যায় ভারতের হাত থাকার বিশ্বাসযোগ্য কারণ আমাদের আছে। সেই কারণেই ভারত পাল্টা চাপ দিয়ে ৪০ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।’ ট্রুডো বলেন, ‘সত্যতা প্রমাণে শক্তির প্রয়োগ করা হলে, বড় রাষ্ট্র ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করলে প্রত্যেকের কাছেই পৃথিবীটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।’

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ নিরসনে কানাডাকেই বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার ক্ষেত্রে সেটা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে চিন্তিত কারণ, ভারত ও কানাডা দুই দেশই তাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

এ অবস্থায় ভারতীয় কূটনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, অচিরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়। এর একটা কারণ, আগামী বছর ভারতের লোকসভার নির্বাচন; দ্বিতীয় কারণ, পরের বছর কানাডার ভোট।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বৈঠকে কানাডা প্রসঙ্গ বিস্তারিতভাবে আলোচনার কথা দুই দেশই স্বীকার করেছে। গত শুক্রবার দিল্লিতে নিজের দেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ভারত ও কানাডা—দুই দেশই আমাদের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ও সঙ্গী। বন্ধু বলেই আমরা চাই, দুই দেশ তাদের মধ্যে বিবাদ ও বিরোধ মিটিয়ে নিক।

মতানৈক্যের অবসান ঘটুক।’ এরপরই ব্লিঙ্কেন জানান, ‘আমরা চাই, তদন্তের ক্ষেত্রে (শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা) কানাডার সঙ্গে ভারত একযোগে এগোক। এ ক্ষেত্রে যে মতপার্থক্য রয়েছে, সহযোগিতার ভিত্তিতে তা মিটিয়ে ফেলুক।’ ব্লিঙ্কেন অবশ্য সেই সঙ্গে এ কথাও মনে করিয়ে দেন, সেটা সম্ভবপর, কানাডা যদি তদন্তের কাজে গতি আনে এবং ভারত তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে। সুত্রঃ প্রথম আলো। সম্পাদনা ম\হ। না ১৩০২

Related Articles