ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার স্কুল বন্ধ, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত লাখো শিশু

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন শিক্ষাবর্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও, ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনের কারণে গাজার শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। গাজায় ১১ মাস ধরে চলা এই সংঘাতের ফলে সব স্কুল বন্ধ রয়েছে এবং ইসরাইল গাজার বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে সরে যাওয়ার নতুন নতুন নির্দেশ দিচ্ছে।

১৫ বছর বয়সী মোয়াতাজ, যিনি দশম শ্রেণিতে পড়ার কথা ছিল, এখন গাজায় যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত। তার পরিবারসহ সে দেইর আল বালাহের একটি আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। পাঁচ সন্তানের জননী, উম্মে জাকির রয়টার্সকে এক টেক্সট বার্তায় জানান, "সাধারণত এই দিনটি আনন্দের হওয়ার কথা ছিল, যেখানে শিশুরা নতুন পোশাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতো। কিন্তু আজ আমাদের একটাই চাওয়া, যেন আর কোনো সন্তান হারানোর আগেই যুদ্ধ শেষ হয়।"

গাজার ভবিষ্যৎ শিশুদের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু তারা যুদ্ধের মুখে লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তারা তাদের শিক্ষা ও অধিকার হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর থেকে গাজার সব স্কুল বন্ধ রয়েছে, এবং ৯০ শতাংশ স্কুল পুরোপুরি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) অক্ষত কিছু স্কুল ভবনকে বাস্তুচ্যুতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করেছে।

ইউএনআরডব্লিউএর যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট তৌমা বলেন, "শিশুরা যত বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকবে, তাদের শেখার আগ্রহ তত কমে যাবে এবং ঝরে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এতে তারা বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীতে নিয়োগের মতো শোষণের শিকার হতে পারে, ফলে তারা হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজন্মে পরিণত হতে পারে।"

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ৬ লাখ ২৫ হাজার শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, এবং ছয় বছর বয়সী আরও ৫৮ হাজার শিক্ষার্থীর এ বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইউএনআরডব্লিউএ তাদের ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে "ব্যাক-টু-লার্নিং" প্রোগ্রাম চালু করেছে, যেখানে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ইউএনডব্লিউআরএ কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি গাজার চতুর্থবারের মতো ভ্রমণ শেষে বলেছিলেন, "গাজায় পাঁচ লাখেরও বেশি শিশু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু বাড়িঘর ধ্বংস হওয়ার ফলে তারা স্কুলে ফিরতে পারছে না।"

গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাই বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে, জাতিসংঘ পোলিও টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো পোলিও শনাক্ত হওয়ার পর, গাজার ছয় লাখ ৪০ হাজার শিশুর কাছে পোলিও টিকা পৌঁছানোর জন্য যুদ্ধ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় অর্ধেকেরও বেশি শিশু পোলিও টিকা পেয়েছে, এবং প্রথম দফার চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় দফার টিকা নেওয়া হবে। সোমবার, জুলিয়েট তৌমা জানান, এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান সংঘাতে ৪০ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সূত্র: যুগান্তর /স/হ/ন ১২/০৯/২০২৪ 

Related Articles