প্রবাসীদের ১৮ দফা দাবিতে কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক মিন্টুর জোরালো অবস্থান

ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা’র সাথে কানাডা প্রবাসী সাপ্তাহিক দেশে-বিদেশে’র প্রধান সম্পাদক ও দেশেবিদেশে টিভি’র সিইও নজরুল ইসলাম মিন্টু।

কানাডা প্রবাসী, সাপ্তাহিক দেশে-বিদেশে’র প্রধান সম্পাদক ও দেশেবিদেশে টিভি’র সিইও নজরুল ইসলাম মিন্টু বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের কাছে প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৮ দফা দাবির স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। গত সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করে তিনি এ দাবিগুলো তুলে ধরেন। আলোচনার সময় বিশিষ্ট সাংবাদিক আনিস আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাতকালে তিনি অবৈধ অর্থ প্রেরণ বন্ধ, রেমিটেন্স প্রণোদনা বৃদ্ধি, দূতাবাসের সেবা উন্নয়ন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনার মতো বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করেন।

উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন প্রবাসীদের এসব দাবিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেন এবং বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

দাবিগুলো হলো:
১) অবৈধপথে অর্থ প্রেরণ বন্ধ করতে হলে রেমিটেন্স প্রণোদনা ২.৫% থেকে ৫% এ উন্নীত করতে হবে।
২) রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হলে সরকারি/বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তি বান্ধব অ্যাপস তৈরি করতে হবে (যে মাধ্যমে কোনো ফি ছাড়া ডলার, পাউন্ড, দিরহাম, রিয়াল, রিঙ্গিত সহজে কনভার্ট করে টাকায় রূপান্তরিত হয়ে প্রাপকের একাউন্টে পৌঁছে যাবে)।
৩) দ্বৈত নাগরিক এবং বিদেশে জন্ম নেয়া বাংলাদেশী বংশদ্ভূতদের ‘নো ভিসা রিকোয়ারমেন্ট’ (এনভিআর) সহজীকরণ ও ‘ফি’ মওকুফ করতে হবে।
৪) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম সেবা-বান্ধব করতে হবে (দেখা গেছে বিভিন্ন দূতাবাসে ফোন করলে কেউ ফোন ধরে না; অটো আনসারিং মেশিন চালু হয়ে যায়। অফিসে গেলে বলে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসতে হবে, সহজ কাজকে জটিল করে সেবা প্রত্যাশীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে)।
৫) জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট নবায়ন, নতুন পাসপোর্ট, পাওয়ার অব অ্যাটর্নী সহ অন্যান্য ডকুমেন্টসের সত্যায়ন কিংবা সংশোধন সহজীকরণ করতে হবে। বিদেশের মাটিতে জন্ম নেয়া বাংলাদেশী বংশদ্ভূতদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট গ্রহণে উৎসাহ দেয়ার জন্য সকল বাধা অপসারণ করতে হবে।
৬) পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের নামে হয়রানি এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করা (সবচেয়ে ভাল হয় এ প্রক্রিয়াটি বাতিল করা)।
৭) বিদেশে বসে অনলাইনের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করণ।
৮) এক কোটির অধিক প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত প্রবাসী আসন এখন সময়ের দাবী।
৯) বাংলাদেশের বাইরে দেশীয় রাজনৈতিক শাখা নিষিদ্ধ করণ (নির্বাচন কমিশনের বিধিমালায় বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত থাকলেও কার্যকর নয়)।
১০) যেসব প্রবাসী উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা বৈধভাবে দেশে প্রেরণ করবেন তাদের বিশেষ সুবিধা প্রদান (যেমন বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, প্লট বন্টনে অগ্রাধিকার, জাতীয় অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রণ ইত্যাদি)।
১১) হুন্ডি ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
১২) উন্নত বিশ্বে (ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া) ষ্টুডেন্ট/ভিজিটর ভিসা প্রসেসিং এর নামে বিভিন্ন সেমিনার, অর্থ সংগ্রহ/অর্থ পাচার বন্ধ করা আবশ্যক। আদম পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩) বিমানবন্দরে স্থাপিত প্রবাসীদের জন্য ‘ওয়ান ষ্টপ ডেস্ক’-কে শক্তিশালীকরণ। (প্রবাসীদের আগমণ, বর্হিগমন, আবাসন ও বাড়িতে যাতায়াত সহ কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে)।
১৪) প্রবাসীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি গ্রাস করা, প্রতারণা কিংবা জবরদস্তি দখল রুখতে হলে প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা বা উপজেলায় পুলিশের বিশেষ ডেস্ক স্থাপন।
১৫) বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী প্রবাসীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবা’ চালু করা এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনে সুযোগ প্রদান।
১৬) প্রবাসীদের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে দূতাবাসের ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ।
১৭) বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী টাকা পাচারকারীদের নাম প্রকাশ করতে হবে। এবং
১৮) প্রবাসী মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রয়োজনীয় কাজগুলোর দায়িত্ব এ মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই। প্রথমতঃ পাসপোর্টের দায়িত্বে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; দ্বিতীয়তঃ দূতাবাসগুলোর তত্তাবধান এবং কনস্যুলেট সার্ভিস প্রদান করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা এ জটিলতার অবসান চাই।

Related Articles