শেখ হাসিনা নিয়ে ভারতের সংকট: সমাধানের পথ কি!
- by Ibrahim Akon
- August 28, 2024
- 130 views
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (বাঁয়ে) ও শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্ত (ডানে) ~ ফাইল ছবি
দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার শাসনকে ভারতের সমর্থন অব্যাহত থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ছাত্র ও সাধারণ জনতার টানা আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সামরিক কার্গো উড়োজাহাজে পালিয়ে গিয়ে সেই ভারতেই আশ্রয় নিতে হয় তাকে। এই আন্দোলনের সময়কালে ৫৪২ জন নিহত হন, আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৭ জনে।
ভারতের ‘সাউথ ব্লক’ দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনার সরকারকে চোখ বন্ধ করে সমর্থন করে এসেছে, এমনকি দুর্নীতিপরায়ণতা এবং অর্থ পাচারের বিষয়েও নির্বিকার থেকেছে। আনুমানিক ১৫০ বিলিয়ন ডলার বা ১৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করতে সহায়তা করেছে ভারত, যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের দ্বিগুণ।
গত কয়েক বছরে ভারতের কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে অবস্থান বদলানোর বারবার অনুরোধ করা হলেও, ভারত সেই অবস্থান বদলাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে নরেন্দ্র মোদির সরকার কখনোই বাংলাদেশের জনগণকে সত্যিকার বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করেনি। বরং হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের জন্য ভারতের জাতীয় স্বার্থকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হাসিনার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ব্যবস্থা নিতে চাইলেও, ভারত সেই প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করতে ওয়াশিংটনে তদবির করেছে। ভারতের লবির প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র হাসিনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পিছপা হয়।
গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশে ৭৫ জন নিহত হলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এটিকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে অভিহিত করেন। গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করলেও, জয়শঙ্কর তার বক্তৃতায় বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো শেখ হাসিনার পতনের নেপথ্যে পাকিস্তান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার দিকে সন্দেহ প্রকাশ করে, যা অনেকেই হাস্যকর হিসেবে বিবেচনা করছেন। এই ঘটনাগুলো ভারতের ও বাংলাদেশের সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ভারত যদি হাসিনাকে আশ্রয় দেয়, তবে এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে। বাংলাদেশের নতুন সরকার হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁকে ফেরত চাইতে পারে। বাংলাদেশের তরুণরা চীনের দিকে ঝুঁকতে পারেন, যা ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়াবে।
এ অবস্থায় ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে হবে এবং নতুন মিত্র খুঁজে নিতে হবে। ৫৩ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু সেই ইতিহাসের কারণে আজকের বাংলাদেশ চিরঋণী নয়।
সবশেষে, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ভারতের শত্রু নয়। বরং সমস্যা ভারতের নেতাদের নীতিগত সিদ্ধান্তে।